নিজস্ব প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া: করোনা মহামারীর কারণে দু’বছর ছেদ পড়েছিল। অতিমারী নিয়ন্ত্রণে আসায় আজ মঙ্গলবার থেকে বাউল সম্রাট লালন শাহের জন্মভিটে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় শুরু হলো তিনদিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব। চলবে আগামী ১৭ মার্চ পর্যন্ত। বাউল সম্রাটের স্মরণোৎসবে যোগ দিতে ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশ থেকে ছেঁউড়িয়ায় হাজির হয়েছেন হাজার-হাজার বাউল ও লালন অনুরাগীরা। দু’বছরের প্রতীক্ষা পরে ফের লালন স্মরনোৎসব শুরু হওয়ায় তাঁরা খুশিতে আত্মহারা।
জনশ্রুতি রয়েছে, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া গ্রামের আখড়াবাড়িই ছিল বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র প্রধান অবস্থান। এখানেই তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাটিয়েছেন। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পয়লা কার্তিক তাঁর প্রয়াণ ঘটে। মৃত্যুর দিনেও তিনি ভক্তদের নিয়ে আসর বসিয়েছিলেন। লালন ফকিরের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী কুঁড়েঘরেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। এখানে লালনের সমাধিস্থলকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৬২ সালে তাঁর সমাধিসৌধ নির্মিত হয়। পরবর্তীতে প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হয় লালন একাডেমি।
অনুসারীদের মতে, তরুণ বয়সে রোগাক্রান্ত ও অচেতন অবস্থায় লালনকে ছেঁউড়িয়া গ্রামের কালিগঙ্গার পূর্বপাশের তীরে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় মলম কারিকর ও তার স্ত্রী মতিজান। পরে অন্যদের সহযোগিতায় সেখান থেকে উদ্ধার করে মলম কারিকরের বাড়িতে এনে অসুস্থ লালনকে সেবাযত্ন করে সুস্থ করে তোলা হয়। এরপর মলম কারিকর নিজেও লালন সাঁইয়ের অনুসারী হয়ে ওঠেন। সিরাজ সাঁইয়ের কাছে দীক্ষালাভের পর মলম কারিকর তাঁর সম্পত্তির একটি অংশ লালনকে লিখে দেন। গুরু সিরাজ সাঁইয়ের নির্দেশে ছেঁউড়িয়া গ্রামেই ঘাঁটি গাড়েন লালন শাহ।
ফকির লালন সাঁই তার জীবদ্দশায় এক বিধবা নারীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এখানে। তিনি পরে লালনের স্ত্রী রূপে এবং বিশাখা নামে পরিচিতি পান। লালন ফকির প্রতিবছর শীতকালে মহোৎসব করতেন। সেই উৎসবে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভক্ত, অনুসারী, সাধু বাউল ফকিররা অংশ নিতেন। উৎসবকে ঘিরে সেখানে বাউল গানের আসর বসত। লালন ও তার স্ত্রী পরিচয়ধারী বিশাখাও সেই আসরে অংশ নিতেন। সব গান মূলত লালন নিজেই রচনা ও সুর করতেন। লালনের আখড়াবাড়িতে প্রায় দুশো বছর ধরে দোলপূর্ণিমায় এই স্মরণোৎসব পালিত হয়ে আসছে। স্মরণোৎসবকে ঘিরে মৃতপ্রায় কালিগঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে বসেছে মেলা।
লালন স্মরণোৎসবকে ঘিরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’- বাউল সম্রাটের সেই অমোঘ বাণীকেই এবারের উৎসবের থিম করা হয়েছে।