নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কথায় বলা হয় নারী-পুরুষ সমান সমান। কিন্তু আদতে তা হয়না। মুখে বললেও জনমানসে মানসিকতা আজও সকলের এক। আর তা থেকেই পুরুষতান্ত্রিকতা সর্বত্র বিরাজমান। কিন্তু ভারতীয় সমাজে পুরুষতান্ত্রিকতা যতই থাক না কেন মণিপুর কিন্তু এসব কিছুর থেকে ব্যাতিক্রম। এখানে আজও মায়ের দ্বারাই পরিচালিত হয় সমস্ত কিছু। আর সেভাবেই মণিপুরের ‘ইমা কেইথেল’ নামক বাজারটি বিশেষভাবে বিখ্যাত।। যার আরেক নাম ‘মায়েদের বাজার’। যা শুধুমাত্র মহিলাদের দ্বারাই পরিচালিত হয়। এখানে নেই কোনও জাতি, ধর্ম, বর্ণের ভেদাভেদ। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে খাবার, কারুশিল্প, পোশাক সমস্ত কিছুই মেলে এই বাজারে। এখানেই শেষ নয়। এই বাজারের টানে প্রতি বছর এখানে বহু পর্যটক আসেন। স্বাভাবিকভাবেই এই বাজারের বিশ্বজোড়া খ্যাতিও রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই বাজারে অসম্ভব রকমের নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলা হয়। সারিবদ্ধভাবে কেনাকাটা করেন এখানে সকলে।
১৯৩৯ সালে ব্রিটিশ আমলে মহিলা পরিচালিত মণিপুরের এই বাজারের পত্তন। যা আজও রমরমিয়ে চলছে। তবে বিভিন্ন তথ্য ও জনশ্রুতি অনুযায়ী এই বাজার আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৩৯ সালে তৈরি হলেও এর বয়স নাকি ৫০০ বছরেরও অধিক। প্রশ্ন জাগতেই পারে , তাহলে কী এই বাজারে পুরুষ নেই? অবশ্যই আছে। তবে ক্রেতারূপে। ভারতের সমস্ত রাজ্যে পুরুষতান্ত্রিকতা প্রাধান্য পেলেও মণিপুর এমন এক রাজ্য যেখানে সংসার থেকে সন্তান, বাজার, জীবিকা সব ক্ষেত্র মহিলারাই পরিচালনা করেন আর তাই হয়তো এমন এক বাজারের নজিরও মেলে সেখানেই।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়। মণিপুরের রাজা নাকি প্রায়ই তাঁর রাজ্যের প্রজাদের সমন পাঠাতেন। আর তাই দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের থাকতে হত বাড়ির বাইরে। বাড়ির কর্তার দীর্ঘদিন বাইরে থাকার ফলে বাড়ির সমস্ত দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিতেন গৃহিণীরাই। এখান থেকেই শুরু মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত সমাজের। তাঁরা প্রত্যেকেই বিবাহিত। সমান তালে সামলান সংসার, সন্তান এবং সঙ্গে ব্যাবসাও।
জানা যায় স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে এই বাজার অত্যন্ত কঠিন লড়াই চালিয়ে রক্ষা করেছেন মণিপুরের মহিলারা। পরবর্তীকালেও কম ঝড় আসেনি। আধুনিকতার স্রোতে গা ভাসিয়ে ২০০৩ সালে মণিপুরের সরকার এই বাজার অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। উদ্দেশ্য ছিল ওই স্থানে সুপার মার্কেট তৈরি করার। সেই পরিস্থিতিও সামাল দিয়েছেন মণিপুরের মহিলারাই। তাঁদের তীব্র প্রতিবাদের কাছে মাথা নত করে সরকারকে সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়।
পর্যটকদের নয়নের মণি মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত এশিয়ার এই সর্ববৃহৎ বাজার। যার টানে প্রতিবছর ফিরে ফিরে আসেন পর্যটকরা। কি মেলে না এখানে? ঝকঝকে শপিং মলের তুলনায় বহু সমৃদ্ধ ও হরেকরকমের জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেন মায়েরা তাঁদের বাজারে। শুঁটকি মাছ, কানের দুল, প্রসাধনী, ভেষজ ওষুধ সব মেলে এই বাজারে। অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গেই সকলের মনে ও বিশ্বের দরবারে বিশেষ জায়গা অর্জন করে নিয়েছে মণিপুরের ‘মায়েদের বাজার’।