নিজস্ব প্রতিনিধি : জীবদ্দশায় সারা ভারত জুড়ে পরিভ্রমণ করেছিলেন পরিব্রাজক স্বামী বিবেকানন্দ। তবে বেলুড় মঠের পরে স্বামীজি যে জায়গায় সবচেয়ে বেশিদিন কাটিয়েছেন, সেটি হল রাজস্থানের খেতড়ি। স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে ছিলেন ১৭৮ দিন। আর খেতড়ির মহারাজার প্রসাদে স্বামীজি কাটিয়েছেন ১০৯ দিন। বেলুড়ের পর এত বেশিদিন কোথাও কাটাননি তিনি। খেতড়ির মহারাজা অজিত সিংহের সঙ্গে স্বামীজির সম্পর্ক ছিল সর্বজনবিদিত। তবে এতদিন খেতড়ির মহারাজার রাজপ্রসাদে স্বামীজি কাটালেও তাঁর সঙ্গে সেখানকার অধিবাসীদেরও সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
জানা যায়, স্বামীজি তিন বার খেতড়িতে গিয়েছিলেন। প্রথমবার গিয়েছিলেন ১৮৯১ সালে। এরপর স্বামীজি যান ১৮৯৩ সালে ও শেষবার স্বামীজি গিয়েছিলেন ১৮৯৭ সালে। খেতড়ির মহারাজা অজিত সিংহের সঙ্গে স্বামীজির আলাপ হয় আবু পাহাড়ের খেতড়ি হাউসে। মহারাজা স্বামীজিকে খেতড়িতে আসার আমন্ত্রণ জানালে স্বামীজি তা গ্রহণ করেন। ১৮৯১ সালের ৭ আগস্ট জয়পুর থেকে খেতড়িতে এসে পৌঁছোন স্বামীজি। প্রথমবার খেতড়িতে আসার কয়েকদিনের মাথাতেই স্বামীজির কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করেন মহারাজা অজিত সিং। মহারাজা যেমন স্বামীজিকে শ্রদ্ধা করতেন, তেমনি স্বামীজিও মহারাজকে ভালবাসতেন। দুজনের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই গভীর ছিল।
জানা যায়, স্বামীজি যখন বিদেশে গিয়েছিলেন, তার সমস্ত খরচ বহন করেছিলেন খেতড়ির মহারাজা। স্বামীজি বিশ্বজয় করে ফিরলে তাঁকে খেতড়ি রাজবাড়িতে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, স্বামীজির অনুরোধে তাঁর মা ভুবনেশ্বরী দেবীকেও অর্থ সাহায্য পাঠাতেন খেতড়ির মহারাজা। ভগিনী নিবেদিতাকে লেখা চিঠিতে সেই কৃতজ্ঞতার কথা স্বীকার করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ স্বয়ং। শিকাগো ধর্মমহাসম্মেলনে যোগ দিয়ে দেশে ফেরার পর স্বামীজিকে সংবর্ধনা দেওয়ারও ব্যবস্থা করেছিলেন খেতড়ির মহারাজা।
স্বামীজি যতবার খেতড়িতে গিয়েছেন, ততবার তিনি শুধু রাজপ্রাসাদের মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। তিনি এলাকার আশেপাশের মানুষের সঙ্গেও মেলামেশা করতেন। খেতড়ি অঞ্চলে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, শেঠজী সম্প্রদায় মানুষের বসবাস থাকলেও অনেক হরিজন, চামার, চেলাপুরি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। এদের সকলের সঙ্গেই স্বামীজির ভালো সম্পর্ক ছিল। ১৮৯৭ সালে যখন খেতড়িতে স্বামীজিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়, সেই অনুষ্ঠানে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও উপস্থিত ছিলেন। জানা যায়, খেতড়ির শিক্ষা প্রসারে স্বামীজির ভূমিকা ছিল অসামান্য। স্বামীজির নির্দেশে খেতড়ির মহারাজা একটি স্থায়ী শিক্ষা বিভাগ করেছিল। সেই শিক্ষা বিভাগ থেকেই তিন থেকে চারটি স্কুল তৈরি করেছিলেন খেতড়ির মহারাজা।
জানা যায়, শেষদিন পর্যন্ত খেতড়ির মহারাজের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল স্বামী বিবেকানন্দ। স্বামীজির সঙ্গে খেতডির মহারাজার পত্রালাপ চলত ১৯০০ সাল পর্যন্ত। স্বামীজির প্রয়াণের আগেই ১৯০১ সালে ১৪ জানুয়ারি খেতড়ির মহারাজা প্রয়াত হয়েছিলেন। ১৮৯১ সাল থেকে মহারাজা অজিত সিংয়ের সঙ্গে নিরবিছিন্ন ভালোবাসা ছিল স্বামী বিবেকানন্দের।