নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশ স্বাধীন হয় ১৯৪৭ সালে। সেই সময়েই হয়েছিল বাংলা ভাগ। অবিভক্ত বাংলার দিনাজপুর জেলা ভাগ হয়ে গিয়েছিল দুই ভাগে। পূর্ব ভাগ পড়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমানের বাংলাদেশে এবং পশ্চিম ভাগ পড়েছিল এপার বাংলার ভাগে। এপার বাংলার ভাগে আসা দিনাজপুর জেলার নাম হয় পশ্চিম দিনাজপুর। বাম জমানাতেই সেই পশ্চিম দিনাজপুর জেলা আবার ভাগ হয় দুই জেলায়। উত্তর দিনাজপুর(Uttar Dinajpur) এবং দক্ষিণ দিনাজপুর। এদের মধ্যে উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর মহকুমার প্রায় সবটাই সংখ্যালঘু(Minority) অধ্যুষিত। জেলার অপর মহকুমা রায়গঞ্জ আবার মিশ্র প্রকৃতির। সেখানে সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি রাজবংশী(Rajbangshi) সম্প্রদায়ের মানুষও আছেন। তবেও এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে(Panchayat Election) সেই সংখ্যালঘু ভোটের জেরেই জেলা পরিষদ(Zilla Parishad) দখলের পাশাপাশি জেলার ৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে বেশির ভাগ সমিতিই দখলের পথে এগিয়ে থাকছে বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC)।
আরও পড়ুন বিজেপি এগিয়ে থাকলে ইচ্ছামতী কী আর হবে, উঠছে প্রশ্ন
উত্তর দিনাজপুর জেলায় রয়েছে ৯টি ব্লক। জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা ২৬। হেমতাবাদ বাদ দিয়ে জেলার সব ব্লক থেকেই ৩টি করে আসন আছে জেলা পরিষদে। উনিশের লোকসভা ভোটে এই সব এলাকায় বিজেপি(BJP) এগিয়ে থাকলেও ছবিটা পাল্টে যায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনে। জেলার ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৭টিতেই জয়ী হয় তৃণমূল। নেপথ্যে ছিল অবশ্যই সংখ্যালঘু মানুষের সমর্থন। রাজবংশীদের সমর্থন ছিল বিজেপির দিকে। তাঁদের সমর্থনেই রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ, এই দুই আসনে জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু পরে সেই দুই বিজেপি বিধায়কই চলে আসেন তৃণমূলে। একুশের ভোটের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জেলা পরিষদের ২৬টি আসনের মধ্যে ১০টি আসনে এগিয়ে আছে বিজেপি। তৃণমূল এগিয়ে ১৬টি আসনে। সেই হিসাবে উত্তর দিনাজপুরের জেলা পরিষদ এবারেও তৃণমূলের দখলে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ভোটের বাজারে এত সহজ সরল হিসাব না টানাই ভাল। কেন?
আরও পড়ুন রাজ্যসভায় ২টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার ভাবনা শুরু বিজেপিতে
কারণ জেলার রাজনীতিতে বাম-কংগ্রেসের(Left-INC) জোরালো উপস্থিতি। প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির জেলায় এখনও কংগ্রেসের পকেট ভোট রয়ে গিয়েছে কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ, করণদিঘী ও ইসলামপুর ব্লকে। আবার বামেদের পকেট ভোট রয়ে গিয়েছে হেমতাবাদ, গোয়ালপোখার-১ ও ২ ব্লকে। অর্থাৎ এই ৭টি ব্লকে তৃণমূল ও বিজেপির জয়ের পথে কাঁটা হতে পারে বাম-কংগ্রেস জোট। তবে চোপড়া ও ইটাহারে তৃণমূলের নিরঙ্কুশ প্রধান্য স্থাপিত হয়েছে। দলের জেলা নেতাদের দাবি, চোপড়া, ইটাহার ছাড়াও হেমতাবাদ, করণদিঘী, গোয়ালপোখার ১ ও ২ এই ৬টি ব্লকের ১৭টি জেলা পরিষদ আসনেই তাঁদের জয় আসবে। বাকি ৩টি ব্লকের ৯টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যেও অন্তত ৩টি আসনে তাঁরা জিতবেন। তাই জেলা পরিষদ দখল নিয়ে তাঁরা চিন্তিত নয়। তবে ইসলামপুর, রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জের পঞ্চায়েত সমিতির ফল নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। সেখানে বিরোধী জোটের ফল ভাল হতে পারে বলেই তাঁরা মনে করছেন।