নিজস্ব প্রতিনিধি: ৩০-৪০ বছর নয়। মাত্র ৪ বছরেই অতিরিক্ত আয়(Extra Income) হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা। না কোনও সিনেমা তারকার কথা বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে না কোনও ব্যবসায়ীর কথাও। বলা হচ্ছে না কোনও মোটা অঙ্কের বেতন পাওয়া কোনও আমলার কথা। রাজ্য পুলিশের মামুলি এক SI বা সাব ইন্সপেক্টর। তিনিই মাত্র ৪ বছরে ২৫ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত আয় করেছেন। শুধু তাই নয়, নগদ টাকা, ফ্ল্যাট মিলিয়ে তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। যদিও এত কিছু করেও সব লুকিয়ে রাখা গেল না। ধরা সেই পড়তেই হল। তবে পশ্চিম বর্ধমান(Paschim Burdhwan) জেলার আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটে(Asansol Durgapur Police Commissionerate) একটি ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা এক SI বা সাব ইন্সপেক্টর মাত্র ৪ বছরে কীভাবে ২৫ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত আয় করেন সেটাই এখন ভাবাচ্ছে রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার(Anti Crime and Corruption Bureau-West Bengal) আধিকারিকদের।
জানা গিয়েছে, আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটে কর্মরত তাপসকুমার মণ্ডল একটি ফাঁড়ির দায়িত্বে ছিলেন। সেই দায়িত্বে থাকাকালীন সময়েই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তার জেরে এই নিয়ে তদন্তে নামেন রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকেরা। দেখা যায়, ২০১৯ থেকে ২০২২ আর্থিক বর্ষে তাপসের আয় সরকারি ভাবে হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা, যা তিনি বেতন বাবদ পেয়েছেন। সেই বেতনের স্লিপ হাতে আসে তদন্তকারীদের। কিন্তু এই ৪ বছরের মধ্যে তাপস ও তার স্ত্রীর সম্পত্তি বেড়েছে বিপুল ভাবে। এই ৪ বছরের মধ্যে ২০ লক্ষ টাকা নগদে তাপস ব্যাঙ্কে জমা করেছিলেন। নিজের ও স্ত্রীর নামে ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে একাধিক বিনিয়োগ করেছেন। সবমিলিয়ে তার পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকা। তারপরেও তাপস হুগলি জেলার সদর শহর চুঁচড়ায় স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট কেনে। এরজন্য ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হয়নি। ফ্ল্যাট কেনার টাকার একটা বড় অংশ দেওয়া হয় নগদে। বাকি টাকা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে সম্পত্তির পরিমাণ ৫০ লক্ষ টাকা।
এই বিপুল পরিমাণ টাকার উৎস জানতে তাপস ও তার স্ত্রীকে জেরা করেন রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকেরা। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এত টাকা তারা কোথা থেকে পেলেন? তার কোনও সদর্থক ব্যাখ্যা দু’জনেই দিতে পারেননি। এরপরই গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত পেতেই তাপদ ও তার স্ত্রীর যাবতীয় ব্যাঙ্ক ও পোস্টঅফিসের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়। মোট ২৪টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। ২০২২-র ডিসেম্বর মাসে আয় বহির্ভূত সম্পত্তির মামলা রুজু করে দুর্নীতি দমন শাখা। একবছর ধরে তদন্ত চলার পর চলতি মাসের প্রথমেই তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট(Charge Sheet) জমা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তার সম্পত্তি অ্যাটাচমেন্টের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।