নিজস্ব প্রতিনিধি: সোম দুপুর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল শক্তিক্ষয়ের পালা। মঙ্গল সকালে বঙ্গোপসাগরে(Bay of Bengal) দাঁড়িয়ে থাকা ‘অশনি’(Ashani) এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। মঙ্গল রাতেই তা আরও শক্তিক্ষয় করে পরিণত হবে সাধারন নিম্নচাপে। আর সেই সঙ্গেই আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই সাগরের বুকে কার্যত বিলীন হয়ে যেতে চলেছে ‘অশনি’। স্বাভাবিক ভাবেই দেশের পূর্ব উপকূলের রাজ্যগুলি অর্থাৎ অন্ধ্রপ্রদেশ(Andhra Pradesh), ওড়িশা(Odisha) ও বাংলায়(Bengal) উদ্বেগ অনেকটাই কমতির পথে। বরঞ্চ এই নিম্নচাপের হাত ধরে প্রবল বৃষ্টির মুখ পড়তে চলেছে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা এলাকা। প্রবল বৃষ্টি হবে দক্ষিণ ও মধ্য ওড়িশার জেলাগুলিতে। তবে বাংলায় ‘অশনি’র সরাসরি কোনও প্রভাব পড়বে না। তবে চলতি সপ্তাহে শনিবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। কেননা এই ঘূর্ণিঝড়ের হাত ধরে সাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকছে দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে। আর তার হাত ধরেই বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়। সঙ্গে থাকবে দমকা ঝোড়ো হাওয়া।
দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ‘অশনি’ গভীর নিম্নচাপ হিসাবে অবস্থান করছে অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়া থেকে ৩৩০কিমি দূরে। বিশাখাপত্তনম থেকে তার দূরত্ব ৩৫০কিমি। কার্যত ‘অশনি’র শক্তিক্ষয়ের পালা শুরু হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তার গতিবেগও কমেছে বিস্তর। এখন মাত্র ৬কিমি বেগে তা উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে। আবহাওয়াবিদদের দাবি, অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলের ১০০কিমির মধ্যে এসে বাঁক নেবে ‘অশনি’। তাতে তার শক্তিক্ষয় আরও দ্রুত হবে। তার জেরে ওড়িশার উপকূলের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত শক্তিক্ষয় হবে ‘অশনি’র। তাই তার আর ল্যান্ডফলের আশঙ্কা নেই। দক্ষিণবঙ্গের বুকেও এই ঘূর্ণিঝড় থেকে আর তাই বড় ভয়ের কোনও কারণ নেই। তবে এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে বাংলার পরিমণ্ডলে সাগর থেকে হু হু করে জোলো বারাস ঢুকছে। তার জেরে মঙ্গলবার দিনভর বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে দক্ষিণবঙ্গজুড়ে। এদিন থেকে শুক্রবার পর্যন্ত, বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, কলকাতা, হাওড়া ও নদিয়া জেলায়। মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি এই তিন দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে।
দিল্লির মৌসম ভবনের দাবি, উত্তর-পশ্চিমের গরম বাতাস এবং বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকের শীতল সমুদ্রই কার্যত যৌথ ভাবে মৃত্যু পরোয়ানা লিখে দিয়েছে ‘অশনি’র জন্য। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ক্রমাগত বয়ে আসা শুকনো গরম বাতাস ঘূর্ণিঝড়কে অভিমুখ বদলাতে বাধ্য করেছে। এর বাইরে সহায় হয়েছে বঙ্গোপসাগরও। সমুদ্রতলের উত্তর দিকের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড়কে পুষ্ট করার মতো যথেষ্ট গরম নয়। তাই, সব দিক থেকেই সাগরের বুকেই অপমৃত্যু হতে চলেছে ‘অশনি’র। এপ্রিল ও মে মাস থেকেই বঙ্গোপসাগর গরম হতে শুরু করে। জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে এই সময়টায় ঘূর্ণিঝড়ের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয় সমুদ্রে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ নির্ণয় হয় বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার নামক স্তরে, মাটি থেকে ৮-১২ কিলোমিটার উচ্চতায়। সেখানেই উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা শুকনো গরম বাতাস ক্রমাগত চাপ দিয়ে অশনিকে অনেকটা উত্তর-পূর্বে সরিয়ে দিয়েছে। ‘অশনি’ যদি শক্তি বাড়িয়ে তীব্র ঘূর্ণিঝড় থেকে ধাপে ধাপে সুপার সাইক্লোন হওয়ার দিকে এগোত, তা হলে হয়তো তাকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হত না উত্তর-পশ্চিমের বাতাসের পক্ষে। সৌভাগ্য সে রকমটা হয়নি।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই কলকাতার আকাশের মুখভার। সোমবার সকালে মুষলধারায় বৃষ্টি হয়েছে। যার জেরে মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় জল জমে গিয়েছিল। এদিনও সকালে শহরের বুকে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। যেহেতু এদিন দিনভর কলকাতার বুকে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে তাই এদিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠতে পারে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। এদিন ভোরে শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শহরে বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ সর্বাধিক ৯৫ শতাংশ। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ন্যূনতম ৭১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে বৃষ্টি হয়েছে ৫৭.৮ মিমি।