নিজস্ব প্রতিনিধি: মুর্শিদাবাদ(Murshidabad)। রাজ্যের অন্যতম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা। একই সঙ্গে একসময়কার কংগ্রেস(INC) প্রভাবিত জেলাও। বাম(Left) জমানায় কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলের(TMC) উত্থানের পরেও মুর্শিদাবাদের মাটিতে নিজেদের অরভাব অক্ষুণ্ণ রেখেছিল কংগ্রেস। এমনকি তৃণমূল জমানাতেও সেই প্রভাব অটুট থেকেছে। কিন্তু ছবিটা আমূল বদলে গিয়েছে বাংলার মাটিতে বিজেপির(BJP) উত্থানের পরে পরেই। ক্রমশই জেলায় ভোটারদের মধ্যে মেরুকরণ হয়ে গিয়েছে যা প্রকাশ্যে আসে একুশের বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফলে। জেলার সংখ্যালঘু ভোট একচেটিয়া ভাবে চলে গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। কংগ্রেসের ঝুলি শূন্য। বামেরা আগের মতো প্রভাব আর ধরে রাখত্ব পারেনি। তবে বিজেপি একুশের ভোটে এই জেলা থেকে ২টি আসন পেয়ে এবার বেশ কিছু জায়গায় শাসক দলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো জায়গায় আছে। তবে শাসক দলের গোষ্ঠীকোন্দল যদি মাথা ব্যাথার কারণ না হয়ে ওঠে তাহলে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জেলায় ঘাসফুলের দাপট অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন বঙ্গে ৩২ হাজার স্বনির্ভরগোষ্ঠীর ৩৬০ কোটি টাকার ঋণ বকেয়া
রাজ্যের অনান্য জেলাগুলির মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলাতেও আসনগুলির পুনর্বিন্যাস হয়েছে। নয়া হিসাবে জেলা পরিষদের(Zilla Parishad) আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৮। জেলার ২৬টি ব্লকের প্রতিটি থেকে ৩টি করে আসন রাখা হয়েছে। উনিশের লোকসভা ভোটে জেলার ৩টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২টিতেই জয়ী হয় তৃণমূল। কার্যত সেই সময় থেকেই জেলার সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক শাসক শিবিরের পক্ষে চলে যেতে শুরু করে। জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ এই ২টি লোকসভা কেন্দ্রই চলে যায় তৃণমূলের দখলে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী সেই নির্বাচনে বহরমপুর থেকে জিতলেও, তাঁকে তাঁর জেলায় তৃণমূলের বিজয়রথ চেয়ে চেয়েই দেখতে হয়েছিল। আবার একুশের বিধানসভা নির্বাচনে দেখা যায় জেলার ২২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২০টিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। শুধু তাই নয়, দেখা যাচ্ছে জেলা পরিষদের ৭৮টি আসনের মধ্যে ৭০টি আসনেই এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। স্বাভাবিক ভাবেই এবারে মুর্শিদাবাদ জেলার জেলা পরিষদ যে এবার তৃণমূলের দখলেই যেতে চলেছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন হড়পা বান, সঙ্গে ধস, কাঠগড়ায় সেবক রংপো রেল প্রকল্প
কিছুদিন আগেও শোনা যেত বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে হারাতে বিরোধিরা ‘সাগরদিঘী মডেল’-কে সামনে রেখে লড়াই করবে। মানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোট গড়বে বাম-বিজেপি-কংগ্রেস। কিন্তু সেগুড়ে সবার আগে বালি দেয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেয়, বাংলায় বিজেপিকে লড়তে হবে একাই। কংগ্রেস বা বামেদের সঙ্গে কোনও জোট গড়া যাবে না। তারপরেও একটা সম্ভাবনা ছিল বাম কংগ্রেস জোটের। কিন্তু সাগরদিঘীর জয়ী বিধায়ক বায়রণ বিশ্বাস কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতেই সেই বাম-কংগ্রেস জোটের চেহারাও বদলে গিয়েছে। অধীরবাবু মুখে জোটের কথা বললেও সেই কথায় বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করেই বামেরা জেলা পরিষদের জন্য একতরফা প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। তবে তাঁরা জানিয়েছে জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়বে। যদিও বামেদের এই পদক্ষেপে এখন জেলার কংগ্রেস নেতারা পাল্টা দাবি তুলেছেন পঞ্চায়েত সমিতি স্তরেও বামেদের সঙ্গে জোট না গড়ার। অর্থাৎ জেলার ২৬টি পঞ্চায়েত সমিতির(Panchayat Samiti) সব আসনেই লড়াই হচ্ছে চতুর্মুখী। তৃণমূল বিরোধী ভোট ভাগ হতে চলেছে বাম, কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। সেই হিসাবে এই স্তরেও তৃণমূলের জয় নিশ্চিত। জেলার প্রায় সব পঞ্চায়েত সমিতিও এবার তৃণমূলের দখলে যেতে চলেছে।
আরও পড়ুন আপনার আধার কার্ডের Biometric কী Lock আছে, না হলেই কিন্তু বিপদ
তবে গ্রাম পঞ্চায়েত(Gram Panchayat) স্তরে কিছুটা হলেও কড়া প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে শাসক শিবিরকে। বিশেষ করে বেলডাঙা-১, বেলডাঙা-২, নওদা, ভরতপুর-১, ভরতপুর-২, লালগোলা, ভগবানগোলা-১, ভগবানগোলা-২, জিয়াগঞ্জ, নবগ্রাম, রঘুনাথগঞ্জ-১, রঘুনাথগঞ্জ-২ ও বহরমপুর ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। অর্থাৎ জেলার ২৬টি ব্লকের মধ্যে ১৩টি ব্লকে লড়াই জোরদার হবে শাসক ও বিরোধিদের মধ্যে। বাকি ১৩টি ব্লকে শাসক পক্ষই এগিয়ে থাকবে। তবে এবার শাসক শিবিরের বড় অ্যাডভান্টেজ হতে চলেছে রাজ্য সরকারের নানান আর্থসামাজিক প্রকল্পের সুফল যা গত কয়েক বছরে জেলার সংখ্যালঘু থেকে তপশিলী মায় আদিবাসী পরিবারগুলির মধ্যেও গিয়ে পৌঁছেছে। তা সে স্বাস্থ্যসাথী হোক কী খাদ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার হোক কী ঐক্যশ্রী, কন্যাশ্রী হোক কী রূপশ্রী। সাগরদিঘী বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে যে ফলই হয়ে থাক না কেন, পঞ্চায়েতে তার প্রভাব পড়বে না বললেই চলে। কেননা বিরোধিরা তো জোটটাই গড়তে পারল না। জোট গড়লে ছবিটা কিছুটা হলেও আলাদা হতো।