নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) ঘরে ঘরে এখন দেখা মিলবে ডাক্তারের। নিজেরাই রোগ কী হয়েছে তা বুঝে যাচ্ছেন, কী ওষুধ খেতে হবে সেটাও নিজেরাই ঠিক করে ফেলছেন, ওষুধের দোকান থেকে নিজেদের পছন্দ মতো সেই সব ওষুধ কিনে এনে মুড়ি মুড়কির মতো খাচ্ছেনও। তাও আবার বড়সড় কোনও রোগের জন্য নয়, মামুলি জ্বর-সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, পেট খারাপের মতো ঘটনায় খেয়ে নিচ্ছেন নিজের ইচ্ছামতন সব ওষুধ যার বেশিরভাগটাই আদতে অ্যান্টিবায়োটিক(Antibiotics)। আর এই অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যাধিক ব্যবহার ঘুর পথে বাংলার বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকটাই। কেননা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের(West Bengal State Health Department) রিপোর্টে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বাংলায় ব্যবহৃত ৫০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিকেই আর কাজ দিচ্ছে না। সেগুলি এক বা একাধিক ব্যাকটেরিয়ায়(Bacteria) রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গিয়েছে। আর এখানেই সব থেকে বড় চিন্তার কারণ। যদি কোভিডের(Covid) নয়া কোনও ঢেউ আসে বা অন্য কোনও প্রাণঘাতী ভাইরাস বাংলার বুকে ছড়িয়ে পড়ে তখন সেই ভাইরাস ঠেকানোর কার্যত কোনও অ্যান্টিবায়োটিকই আর কাজ দেবে না। স্বাভাবিক ভাবেই এই নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি নবান্নের অন্দরেও।
আরও পড়ুন ‘দিল্লির কিছু মানুষ হয়তো আমাকে পছন্দ করেন না’, মন্তব্য অমর্ত্যের
সম্প্রতি রাজ্য সরকার চালু করেছিল নতুন একটি প্রকল্প, যার নাম ‘মাইক্রোবিয়াল আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ডিটেকশন সিস্টেম’। সহজ ভাষায়, বাংলার হাসপাতালগুলিতে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকগুলি কতটা কার্যকর? কোন কোন ব্যাকটেরিয়ায় কার্যকর? কোনগুলিতে কাজ করছে না? কতটা কাজ করছে না? পুরনো অ্যান্টিবায়োটিকগুলির কী অবস্থা? মরণাপন্ন রোগীদের বাঁচাতে আর কী ‘অস্ত্র’ ডাক্তারদের হাতে রয়েছে? এই গুরুতর প্রশ্নগুলিকে সামনে রেখেই শুরু হয় সমীক্ষা। রাজ্যের প্রায় সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি রোগীর সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করে যে সব তথ্য পেয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা তা তাঁদের রাতের ঘুম ছুটিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কী আছে রিপোর্টে? সব থেকে বিস্ফোরক তথ্য এটাই যে, কোনও কোনও অ্যান্টিবায়োটিক ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই নির্ধারিত অসুখে কাজে দিচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালের আউটডোরের ৯২ শতাংশ রোগীদের ক্ষেত্রেই আর কাজ দিচ্ছে অ্যাজিথ্রোমাইসিন। ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে কাজ করছে না সেফিক্সিম। ওফ্লক্সাসিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক অচল ৫৭ শতাংশ ক্ষেত্রে। বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয় অ্যান্টিবায়োটিক অ্যামক্সিসিলিন-ক্লাভুলেনিক অ্যাসিড কাজেই আসছে না অন্তত ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে। বেশ কিছু রোগে শেষ অস্ত্র ইমিপেনেম ও মেরোপেনেমের মতো জীবনদায়ী অ্যান্টিবায়োটিক।
আরও পড়ুন ম্যাজিগ ফিগার থেকে সামান্য বেশি, বেশ চাপে মোদি
জানা গিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে বাংলার ২৩টি মেডিকেল কলেজের আউটডোর, ওয়ার্ড, আইসিইউ ও ভেন্টিলেশনের রোগীদের বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। ৬,৫৩৬টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট জমা পড়ে স্বাস্থ্যভবনে। সেই রিপোর্টই বলে দিচ্ছে বাংলায় কার্যত কার্যকারিতা হারিয়ে বসে আছে যাবতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। আর তার নেপথ্যে অতি বুঝদার সবজান্তা বাবা আম পাবলিক। ডাক্তার না দেখিয়ে, বিনা প্রেসক্রিপশনে ওষুধের দোকান থেকে মুড়ি মুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক কেনার জেরেই আজ এত বড় বিপদ ধেয়ে এসেছে বাংলার বুকে। সমীক্ষাতে এটাও জানা গিয়েছে, ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ৫টি ব্যাকটেরিয়াই বাংলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এগুলি হল—ই কোলাই (সবচেয়ে বেশি), ক্লেবসিয়েলা, স্টেফাইলোকক্কাস, অ্যাসিনেটোব্যাকটর ও সিউডোমোনাস। আর এদের দমন করতে হালফিলের অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে এই ওষুধগুলি কার্যত আর কোনও কাজই দিচ্ছে না বাংলায়। কিন্তু পুরানো ওষুধের ব্যবহার কম হওয়ায় এই রোগগুলির উপশমের ক্ষেত্রে সেগুলি এখন আবার মারাত্মক রকম ভাবে কাজ দিচ্ছে বলেও সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন বাংলা শিখলেন রাজ্যপাল, মালয়ালম বললেন মুখ্যমন্ত্রী
তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, পুরাতন ওষুধ কাজ দিচ্ছে, নতুন ওষুধ কাজ দিচ্ছে না এটা কোনও সমাধান সূত্র নয়। অবিলম্বে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে, ওষুধের দোকান থেকে বিনা প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক কেনা বন্ধ করতে হবে আইন করে। বন্ধ করতে হবে যত্রতত্র একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ। না-হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে। প্রথম হোক বা তৃতীয় পর্যায়ের, যেকোনও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে বেশ সাবধানে এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে।