নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০১১ সালের পরিবর্তনের পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ও তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্যের মা-মাটি-মানুষের সরকার বার বার বার্তা দিয়েছে যে এই সরকার জঙ্গলমহলের মানুষের ভাবাবেগকে কোনওরকম ধাক্কা দেবে না। তাঁদের সমাজ ও সংস্কৃতিকে সম্মান জানিয়েই সেখানে উন্নয়নের কাজ চালিয়ে নিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে রক্ষা করা হবে জঙ্গলমহলের শান্তিও। সেই বার্তা যে নিছক রাজনৈতিক আশ্বাস নয় তার আরও একবার প্রমাণ মিলল। মদ প্রস্তুতকারী একটি বেসরকারি সংস্থা তাঁদের উৎপাদিত একটি মদের নাম রেখেছিল ‘ঝুমুর’। রাজ্য আবগারি দফতর প্রাথমিক ভাবে তাতে অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু জঙ্গলমহলের কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিবাদে রাতারাতি সেই মদের নামকরণ বাতিল করে দিয়েছে রাজ্যের আবগারি দফতর।
শনিবার মাওবাদীরা দেশজুড়ে ২৪ ঘন্টা বনধের ডাক দিয়েছিল। তবে জঙ্গলমহলের বুকে দুই একটি ব্লক ছাড়া সেই বনধের সেই রকম কোনও প্রভাব পড়েনি। কিন্তু সেই বনধের মধ্যেও ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি থানার গিধনী এলাকায় ধামসা-মাদল নিয়ে মিছিল করেন কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষেরা। সেই মিছিল ছিল কার্যত প্রতিবাদ মিছিল। কেননা ‘ঝুমুর’ নামের লোকগীতির ধারা কুড়মি সমাজের আদি সংস্কৃতির অঙ্গ। সেই সংস্কৃতির নামে মদের নামকরণ করার জেরে জঙ্গলমহলের কুড়মি সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। সেই ক্ষোভের জেরেই হয় প্রতিবাদ মিছিল। জেলা প্রশাসন মারফত তা জানতে পারে নবান্ন। এরপরে শনিবার রাতেই রীতিমত নির্দেশিকা জারি করে রাজ্যের আবগারি দফতর জানিয়ে দেয়, ঝুমুর নামের কোনও মদই রাজ্যের বাজারে আসছে না। এই বিষয়ে রাজ্যের আবগারি কমিশনার উমাশঙ্কর এস জানিয়েছেন, ‘বেসরকারি উৎপাদন সংস্থা নিজেদের মতো করে মদের নামকরণ করে থাকে। আবগারি দফতর থেকে শুধু দেখা হয় মদ প্রস্তুতের উপাদান ও পদ্ধতি ঠিকমতো মানা হয়েছে কিনা। দেখা হয় মদের নামকরণ কোনও মনীষী বা কোনও ধর্মীয় রীতিনীতির নামে হচ্ছে কিনা। সেটা যাতে না হয় সেই দিকেই লক্ষ্য রাখা হয়। জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের আপত্তি শুনেই উৎপাদক সংস্থার সঙ্গে কথা বলে ঝুমুর নামটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ঝুমুর নামের কোনও দেশী মদ রাজ্যের বাজারে আসছে না। ওই নামের মদের বোতল একটিও রাজ্যের বাজারে পাওয়া যাবে না।’
বিজেপি অবশ্য এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মাঠগরম করতে নেমে পড়েছে। তাঁদের দাবি, কুড়মি সমাজের আপত্তিতে নয়, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর টুইট বার্তার পরেই রাজ্য আবগারি দফতর মদের নাম বদল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেননা ওই নাম বদল না হলে বিজেপি রাজ্য জুড়ে আন্দোলন শুরু করার হুমকি দিয়েছিল। এই বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী শনিবার টুইট করে জানিয়েছিলেন, ‘দেশী মদের নামকরণ হয়েছে ঝুমুর। এমন নামকরণ করে রাজ্য সরকার জঙ্গলমহলের মানুষের ভাবাবেগকে উপেক্ষা করেছে।’ তবে রাজ্য আবগারি দফতর বিজেপির এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে। তাঁরা কুড়মিদের বিক্ষোভকেই মদের নামকরণ বাতলের কারণ হিসাবে তুলে ধরছেন। রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত সামনে আসার পরে পরেই রবিবার সকালে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন কুড়মি সমাজের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি বীরেন্দ্রনাথ মাহাতো। তিনি জানিয়েছেন, ‘রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ। তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। হয়েছে। ঝুমুর কুড়মি সমাজের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। সেই নামে মদের নামকরণ করা ঠিক হয়নি।’