নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশ্য হোক বা চার দেওয়ালের অন্দরে বঙ্গ বিজেপি(Bengal BJP) নেতৃত্ব এটা মানতে নারাজ যে কেন্দ্র সরকার(Central Government) বাংলার টাকা আটকে রাখার জন্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে। তাঁদের একমাত্র দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে(Panchayat Election) সন্ত্রাস হয়েছে আর ভোট লুঠ হয়েছে। কিন্তু রাজ্য নেতাদের এই দাবির সঙ্গে একদমই সহমত নন দলেরই নীচুতলার কর্মীরা। তাঁরা মানছেন সন্ত্রাস হয়েছে, ভোট লুঠ হয়েছে। কিন্তু সেটাই বিজেপির মুখ থুবড়ে পড়ার একমাত্র কারণ নয়। বিজেপিকে মানুষ প্রত্যাখান করেছেন কেন্দ্র সরকার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প, আবাস যোজনার টাকা, গ্রাম সড়ক যোজনার টাকা, মিড ডে মিলের টাকা আটকে রাখার কারনে। তাই তাঁরা চান কেন্দ্র সরকার দ্রুত এই সব প্রকল্পের টাকা ছাড়ুক। না ছাড়লে বাংলার মানুষ আর ২৪’র ভোটে(General Election 2024) বিজেপির দিকে ঘুরেও তাকাবে না। উনিশের ভোটে জেতা ১৮টা আসনও আর ধরে রাখা যাবে না। যদিও বেড়ালের গলায় ঘন্টা কে বাঁধবে সেটাই বড় প্রশ্ন। কেননা বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতারাই চিঠি লিখে টাকা পাঠানো বন্ধ করিয়েছেন।
আরও পড়ুন সরকার ভেঙে দেওয়াটাও গণতন্ত্রবিরোধী, সুকান্তের বিরোধী সুর দিলীপের গলায়
এবারের পঞ্চায়েত ভোটে দেখা যাচ্ছে বিজেপির সাফল্য সীমিত থেকেছে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেই। যেখানে যেখানে বিজেপি গ্রাম পঞ্চায়েতে জিতেছে দেখা যাচ্ছে সেখানে সেখানে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ স্তরে জিতেছে তৃণমূল(TMC)। সেখানে যদি ভোট লুঠ হতো তাহলে ৩টে স্তরেই তৃণমূল জিততো। কিন্তু মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পেরেছেন বলেই সেখানে বিজেপি জিতেছে। কিন্তু সেই মানুষেরাই পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ স্তরে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। কেন এমন হয়েছে? ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, স্থানীয় স্তরে দুর্নীতি ছিল বা তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল বলেই গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বিজেপিকে মানুষ ঢেলে ভোট দিয়েছে কিছু কিছু এলাকায়। কিন্তু কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভের জেরেই তাঁরা আর পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ স্তরে বিজেপিকে ভোট দেননি। আমজনতার এই ক্ষোভের আঁচ বেশ পাচ্ছেন বিজেপির নীচুতলার নেতা থেকে কর্মীরা। তাঁরা এটাও বুঝছেন যে, কেন্দ্র টাকা না ছাড়লে ২৪’র ভোটে বিজেপি রাজ্যের ১টি আসনেও জয়ের মুখ দেখতে পাবে না। আর তাই তাঁরা দ্রুত বাংলার হকের টাকা ছাড়ার পক্ষেই মত দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন আরও বেশি করে কৃষকদের থেকে ধান কিনবে মমতার সরকার
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এদের কথা শুনছে কে? বঙ্গ বিজেপির নেতারা তো আর দলের নীচুতলার নেতাকর্মীদের কথা শুনে দল চালান না। তাঁরা দল চালান কিছুটা নিজেদের মতো করেই। সেখানে যে সব সময় সঙ্ঘের ভূমিকা থাকে তাও নয়। খালি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে কোনও নির্দেশ এলে তাঁরা একটু নড়েচড়ে বসেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা আগামী দিনেও বাংলার হকের টাকা আটকে রাখার পক্ষেই সাওয়াল করে যাবেন। সেই সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটে দলের হারের একমাত্র কারণ হিসাবে ‘সন্ত্রাস’ আর ‘ভোটলুঠ’কেই দায়ী ঠাউরে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাবেন। রেজাল্টটাও দেখতে পাবেন হাতেনাতে, ২৪’র ভোটে।