নিজস্ব প্রতিনিধি: বেইমানি কেউ মেনে নেয় না। ধূপগুড়ির জনতাও মেনে নেননি। কড়া জবাব দিয়েছেন তাঁরা বিজেপিকে এবং অবশ্যই মিতালি রায়কে(Mitali Roy)। সেই মিতালি যিনি এসেছিলেন বামপন্থী পরিবার থেকে। সেই মিতালি যাকে ধূপগুড়ির বিধায়ক বানিয়েছিল তৃণমূল(TMC)। সেই মিতালি যার অনুরোধ রেখেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। ধূপগুড়ি ব্লক থেকে ভেঙে বানারহাটকে পৃথক ব্লক গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই কথা অনুযায়ী চলতি বছরেই বানারহাট পৃথক ব্লক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। পেয়েছে পৃথক পঞ্চায়েত সমিতিও। অথচ ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে(Dhupguri By Election 2023) মিতালিকে টিকিট না দেওয়াই প্রথম থেকেই দলের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন তিনি। শেষে ভোটের ৪৮ ঘন্টা আগে দলও ছাড়লেন। কিন্তু এবার কী হবে? তাঁর কেরিয়ার তো বিশ বাঁও জলে চলে গেল।
তৃণমূলের তরফে মিতালিকে শুধু ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেই টিকিট দেওয়া হয়নি। তাঁকে একুশের ভোটেও টিকিট দেওয়া হয়েছিল। উনিশের লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি(BJP) জয়ী হয়েছিল। সেই জয়ের পিছনে ছিল ধূপগুড়িতে প্রাপ্ত প্রায় ১৪ হাজার ভোটের লিড। তারপরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেকেই বলেছিলেন মিতালিকে একুশের ভোটে আর টিকিট না দিতে। কেননা তাঁর অনুগামীরাই বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু মমতা একুশের বিধানসভার ভোটে মিতালিকেই টিকিট দিয়েছিলেন। যদিও মিতালি সেই নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী বিষ্ণুপদ রায়ের কাছে হেরেছিলেন ৪,৩৫৫ ভোটে। মিতালির অভিযোগ সেই নির্বাচনের পরে তৃণমূলের কেউ নাকি তাঁর সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ রাখেনি। কেউ নাকি তাঁর কোনও খোঁজখবর রাখেনি। দলের কোনও কাজে নাকি তাঁকে লাগানো হয়নি। অথচ তিনি নিজেই ভুকে গিয়েছিলেন, একুশের ভোটের পরে মুখ্যমন্ত্রী যখন জলপাইগুড়ি জেলা সফরে গিয়েছিলেন তখন তাঁর প্রশাসনিক সভায় উপস্থিত ছিলেন মিতালি। সেই সভাতেই মিতালি মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন বানারহাটকে পৃথক ব্লক হিসাবে গড়ে তুলতে। সেই অনুরোধ রেখেওছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু এতকিছুর পরেও মিতালি কী করলেন? তিনি ঘরে বসে ষড়যন্ত্রের সোয়েটার বুনতে শুরু করেছিলেন। তৃণমূলের পিঠে ছুরি মেরে বিজেপিতে যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন। এমনকি ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রচারেও নামেননি তিনি। নামেনি তাঁর অনুগামীরাও। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তারপর নাম কা ওয়াস্তে মিতালি নেমেছিলেন তৃণমূলের হয়ে প্রচারে। যদিও ততক্ষণে ষড়যন্ত্রের ব্লু প্রিন্ট রচনার বাস্তবায়ন ঘটা শুরু হয়ে গিয়েছে। অভিষেকের সভাতেও হাজির ছিলেন মিতালি। কিন্তু সেই সভার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তিনি চলে গেলেন বিজেপিতে। ভোটের দেরী তখন মাত্র ৪৮ ঘন্টা। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর এই বেইমানি মেনে নেননি ধূপগুড়িবাসী। মেনে নেননি তাঁরই অনেক অনুগামী। রেজাল্ট? বিজেপি গেল হেরে, মিতালি গেল ভেসে। কেননা তাঁর আর কোনও রাজনৈতিক গুরুত্ব রইল না। বিজেপিতে থেকেও তিনি একঘরে হয়ে থাকবেন। এখন তিনি ‘না ঘরকা না ঘাটকা।’ তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারও বিশ বাঁও জলে চলে গেল। বেইমানদের এমনটাই দশা হয়, ইতিহাস বার বার তা দেখিয়ে দিয়েছে। দেখতে পান না শুধু মিতালির মতো বেইমানরা।