24ºc, Haze
Saturday, 1st April, 2023 8:00 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি: একই পরিবারের চার জনের মৃতদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজ্যের ‘ইস্পাতনগরী’ হিসাবে পরিচিত Durgapur শহরে। Durgapur Municipal Corporation’র ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কুরুড়িয়া ডাঙার মিলনপল্লি(Milanpally) এলাকায় এদিন এক দম্পতি ও তাঁদের দুই সন্তানের দেহ উদ্ধার হয়। এলাকাবাসী ও পরিবারের একাংশের দাবি ঘটনাটি খুনের(Murder)। কেননা তাঁরা দেখতে পান মৃত অমিত মণ্ডল(৩৭)-এর হাত গামছা দিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধা ছিল। সেই সঙ্গে বাড়ির সিসিটিভি কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। রীতিমত পরিকল্পনা করেই এই খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দা ও এলাকাবাসীর। অমিতবাবু ছাড়াও এদিন ওই বাড়ি থেকে তাঁর স্ত্রী রূপা মণ্ডল(৩২) ও তাঁদের দুই সন্তান- নিমিত মণ্ডল(৭) ও নিকিতা মণ্ডল(১৪ মাস)-এর দেহ উদ্ধার হয়। আর এই খুনের ঘটনায় নানারকমের দাবি উঠতে শুরু করেছে। যার অন্যতম হল নিয়োগ দুর্নীতির ছায়া।
আরও পড়ুন ৮ লক্ষ পড়ুয়াকে ১৪০০ কোটির স্কলারশিপ দিচ্ছে মমতার সরকার
রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাবাসী অমিতের বাড়ির সামনে জড়ো হন। তাঁদের দাবি, খুন করা হয়েছে ওই দম্পতি এবং তাঁদের সন্তানদের। দুর্গাপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহ উদ্ধারের চেষ্টা করলে তাদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এলাকাবাসী এবং মৃতের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। কেননা এলাকাবাসী ও অমিতের মাসতুতো বোন সুদীপ্তা ঘোষের অভিযোগ, অমিতের হাত গামছা দিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধা ছিল। তাই ঘটনাটি কিছুতেই আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে না। পুলিশ(Police) ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চাইছে। যদিও পুলিশের দাবি, বাড়ির ভিতর থেকেই অমিতের ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। ওই ঘরেই বিছানায় পড়ে ছিল তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তানের দেহ। কিন্তু এই দাবি মানতে নারাজ এলাকাবাসী ও অমিতের পরিবারের একাংশ। ঘটনার জেরে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের DC(East) কুমার গৌতম জানিয়েছেন, মৃত ব্যক্তির পরিজনদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিবাদ ছিল। তবে এটি খুন না আত্মহত্যা, তা নিয়ে আগাম কোনও সিদ্ধান্তে নেওয়া সম্ভব নয়। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করার পরই এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসা যাবে।
আরও পড়ুন রাজ্যের সরকারি কর্মীদের জন্য বড় ঘোষণা মমতা সরকারের
জানা গিয়েছে, অমিতের মা বুলারানী মণ্ডল ছিলেন বাপের বাড়ি ঘেঁষা। ছেলে-বই-নাতি-নাতনির তুলনায় বাপের বাড়ির সদস্যদের তাঁর টান ছিল বেশি। সেই সূত্রকে কাজে লাগিয়ে অমিতদের সমস্ত সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল অমিতেরই মামাতো ভাইয়েরা। এলাকাবাসীর দাবি, বাবার মৃত্যুর পর অমিতের প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন। আবার অমিতের স্ত্রী রূপা মণ্ডল একটি সরকারি স্কুলে পড়াতেন। কিন্তু সেই সম্পত্তি অমিতের কাছ থেকে কেড়ে নিতে নাকি উঠে পড়ে লেগেছিলেন অমিতের মামাতো ভাই-বোনেরা। সেই বিষয়ে আবার পূর্ণ মদত ছিল অমিতের মা বুলারানীর। সম্পত্তি নিয়ে সেই বিবাদের জেরে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকত অমিতের। তাই বুলা থাকতেন তাঁর বাপের বাড়িতে। যদিও অমিত মৃত্যুর আগে Whatsapp Message-এ চাঞ্চল্যকর দাবি করে গিয়েছেন। সেখানে লেখা আছে, বুলা বাপের বাড়ি থেকেই বিভিন্নভাবে তাঁকে আত্মীয়দের দিয়ে মানসিক নির্যাতন করতেন। বেশ কয়েকদিন ধরে তাঁদের দুই-একজন আত্মীয় প্রতিদিনই তাঁদের বাড়িতে যাতায়াত করছিলেন এবং নানান ভাবে তাঁকে মানসিক অত্যাচার করা হচ্ছিল।
আরও পড়ুন মমতার বাংলায় বাড়ছে RSS, ১ বছরেই নয়া ৫৮৩ শাখা
এদিন অমিতের মাসতুতো বোন সুদীপ্তা ঘোষ সংবাদমাধ্যম ও পুলিশের কাছে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, অমিত ছিলেন একজন জমি ব্যবসায়ী। তাঁর মামাতো ভাই সুশান্ত নায়েক ও প্রশান্ত নায়েকও জমি ব্যবসায়ী। বিভিন্ন সময়ে সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে বেআইনিভাবে জমির লেনদেন করে বিপুল সম্পত্তি করেছেন প্রশান্ত ও সুশান্ত। সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কোটি-কোটি টাকা হাতিয়েছেন সুশান্ত নায়েক। সুদীপ্তার দাবি, ‘এটি আত্মহত্যা নয়, খুনের ঘটনা। দাদার হাত গামছা দিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধা ছিল। বাড়ির সিসিটিভি কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। শনিবার রাতে বুলারানী মণ্ডল এই বাড়িতেই ছিলেন। উনি নিজের ছেলে, ছেলের বউ, নাতি-নাতনিওদের কখনও ভাল চোখে দেখত না। পরিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছিল অমিত ও রূপাকে। বাড়ির মধ্যে থাকা সিসিটিভি বন্ধ ও রাতে স্ট্রিট লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। দাদা মারা যাওয়ার আগে আমাকে অনেক কথা বলে গিয়েছে। Whatsapp Message-এও সেই সব কথা বলে গিয়েছে। দাদা জানতে পেরে যায় যে মামার বাড়ির পরিবারের বেশ কিছুজন ২০১২ সালে টেট পাস না করেও চাকরি পেয়েছিল।’
আরও পড়ুন Police Custody-তে অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারায় অভিযুক্ত জিতেন্দ্র
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিত তাঁর Whatsapp Message-এ কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়(Justice Abhijeet Gangopadhay) ও CBI-য়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথা লিখেছেন। ওই মেসেজে নিজেদের মৃত্যুর জন্য মামাতো ভাই-বোনেদের দায়ী করেছেন অমিত। তাঁর মামাতো ভাই-বোনেরা ২০১২ সালে টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ না দিয়ে স্কুলের চাকরি পেয়েছিলেন। ওই মেসেজে তাঁদের নাম উল্লেখ, স্কুলের নাম উল্লেখ করে সিবিআই তদন্তের দাবি করে গিয়েছেন অমিত। তিনি লেখেন, ‘আমরা চলে যাচ্ছি। তোমরা এবার সুখে শান্তিতে থাক।’ মেসেজে লিখে গিয়েছেন কার কার কাছে, কত টাকা পান সেটাও। সমস্ত বিষয়টি পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে। যাদের বিরুদ্ধে, যেসব নাম তাঁর মেসেজে লেখা আছে, সকলকেই আটক করা হবে বলে জানিয়েছেন DC(East) কুমার গৌতম। যাঁরা তাঁকে বিব্রত করেছেন দিনের পর দিন, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের পুরোটা জুড়ে তাঁদের নাম লিখে গিয়েছেন অমিত। সেই ম্যাসেজ দেখে এদিন অমিতের মা, তাঁর দুই মামাতো ভাইকে আটক করেছে পুলিশ।