নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘বন্যেরা বনে সুন্দর’, তাই বনের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বনের জীবদের। সরিয়ে ফেলা হচ্ছে বনের মধ্যে থাকা মানুষের বসতি। ছবিটা উত্তরবঙ্গের(North Bengal) আলিপুরদুয়ার(Alipurduyar) জেলার বক্সা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ(Buxa Tiger Reserve Forest) তথা বক্সা জাতীয় উদ্যানের। ব্রিটিশ আমলে নেপাল, ভুটান থেকে এসে এই জঙ্গলে বসতি স্থাপন করেছিল একদল মানুষ। এখন তাঁরা বন্যপ্রাণের সঙ্গেই বক্সা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ তথা বক্সা জাতীয় উদ্যানের কোর অঞ্চলে(Core Area) বসবাস করেন। আদালতের নির্দেশে এবার সেই বসতিকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। আর তার জন্য স্বেচ্ছায় যাঁরা স্থানান্তর হতে চান, তাঁদের সরানোর কাজ দ্রুত শুরু করতে চলেছে রাজ্যের বনদফতর। অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রের(Modi Government) তরফে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যপিছু আর্থিক সহায়তা হিসেবে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। এই শর্তে দু’টি গ্রাম রাজিও হয়েছে। পুনর্বাসনের(Rehabilitation) জন্য ওই পরিবারগুলিকে জমি দেবে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন NBSTC’র চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতন বাড়ল, বাস বাড়াচ্ছে WBTC
সম্প্রতি বক্সা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ তথা বক্সা জাতীয় উদ্যানে বাঘের উপস্থিতির কথা মেনে নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। আর তারপরেই সেখানের কোর অঞ্চলে থাকা জনবসতি সরিয়ে নিতে অর্থের সংস্থান করতেও এগিয়ে এসেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। এই প্রক্রিয়াতে রাজি আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও। তবে রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকেও শর্ত দেওয়া হয়েছে যারা নিজেরা সরে আসতে রাজি হবে শুধুমাত্র তাঁদেরকেই সরানো হবে। জোর করে কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না। যারা নিজেরা সরে যেতে চাইবেন তাঁদের জন্য পুনর্বাসনের জমি দেবে রাজ্য সরকার। ৭৬০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে রয়েছে বক্সা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ তথা বক্সা জাতীয় উদ্যান। ১৯৮৩ সালে সেখানে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ শুরু হয়। পরে জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি মেলে। বর্তমানে এই অরণ্যে ক্লাউডেড লেপার্ড, ইন্ডিয়ান লেপার্ড, হাতি, বাইসন, সম্বর ডিয়ার, এশিয়ান গোল্ডেন ক্যাট সহ নানা প্রাণী দেখা যায়। এ বছর ক্যামেরায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবিও ধরা পড়েছে।
আরও পড়ুন মোদির ভারতে কেন্দ্রীয় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়ার হিড়িক অনগ্রসরদের
রাজ্যের বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বক্সার কোর অঞ্চলে মোট ১৫টি গ্রাম রয়েছে। হাজারের কাছাকাছি জনসংখ্যা। ওই বসতি তথা গ্রামগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যাঁরা জঙ্গল থেকে অন্যত্র স্থানান্তর হবেন, তাঁদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলায় ঘর তৈরির জন্য খাস জমি দেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে, ওই গ্রামগুলিকে কোর অঞ্চল থেকে সরাতে হবে। কারণ, যেখানে মানুষের বসতি থাকে এবং গৃহপালিত পশু ঘুরে বেড়ায়, সেখানে বন্যপ্রাণ থাকতে চায় না। তাই বসতি স্থানান্তর হয়ে গেলে বন্যপ্রাণীরাও জঙ্গলে অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারবে। ১৯২৮ সালে নেপাল, ভুটান ও দার্জিলিং থেকে কিছু মানুষ এসে বক্সার জঙ্গলে থাকতে শুরু করেন। তারপর বংশ পরম্পরায় তাঁরা থেকে গিয়েছেন। তাঁদের পুনর্বাসনের কাজই এবার শুরু হচ্ছে। ১৫টি গ্রামের মধ্যে গাংগুটিয়া এবং গুটিয়া বক্সি— এই দু’টি গ্রামের মানুষ অন্যত্র সরে যেতে রাজি হয়ে গিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে তাঁদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করা হবে। আগামী ৯ মাসের মধ্যে বাকিরাও সরে যাবেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য CAMPA তথা ‘ক্যাম্পা’ প্রকল্পে ১৭৫ কোটি টাকা খরচ হবে।