নিজস্ব প্রতিনিধি: তাদের দেখা মেলে পাহাড়ে আর জঙ্গলে। উত্তরবঙ্গের(North Bengal) বুকে তো বটেই দক্ষিণবঙ্গেরও বেশ কিছু জঙ্গলে তার দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলার(Bengal) বুকে তাদের সংখ্যা ঠিক কত সেটাই এতদিন জানা ছিল না। সেই জন্যই শুরু হয়েছিল সমীক্ষা(Survey)। তবে সেটা শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গের বুকেই। কেননা দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলগুলি এখন তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান হয়ে উঠতে পারেনি। সেই উত্তরবঙ্গের জঙ্গল থেকেই ১০৮টি নমুনা(Sample) সংগ্রহ করে তা পাঠানো হল DNA Test-এর জন্য। কথা হচ্ছে যাদের নিয়ে তাদের আমজনতা চেনে ভাল্লুক নামে। আর ইংরেজিতে তাকে আমরা বলি Black Bear। সেই Black Bear-দের ১০৮টি নমুনা অভিনব পদ্ধতিতে সংগ্রহ করে তা পাঠানো হয়েছে DNA Test-এর জন্য। রাজ্য বনদফতরের কাছে তথ্য ছিল না উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে ঠিক কত Black Bear আছে। আর সেটা জানতেই গত একমাস ধরে ডুয়ার্সসহ উত্তরবঙ্গের নানা এলাকায় চলেছে শুমারির কাজ। ৮৮টি লোমের এবং ২০টি নমুনা রক্ত-মাংসের নমুনা মিলিয়ে মোট ১০৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য হয়দরাবাদে পাঠানো হয়েছে।
রাজ্যে এই প্রথমবার কালো ভাল্লুক নিয়ে শুমারি হল। পাহাড় ও সমতলের মাঝামাঝি অঞ্চলে বসবাস করে এই বন্যপ্রাণীরা। বাঘ, গন্ডারের শুমারি হলেও, কালো ভাল্লুকের শুমারি অতীতে কখনই বাংলার বুকে হয়নি। ভাল্লুকের এই শুমারি ঠিক ভাবে করার জন্য রাজ্য বনদফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের গত নভেম্বরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত একমাস ধরে শুমারির কাজ চলে। যদিও প্রথম বার এই শুমারি হচ্ছে বলে কয়েকটি এলাকাকে ‘কভার’ করা যায়নি। তবে, এই অভিজ্ঞতা নিয়ে পরের বার শুমারিতে উত্তরবঙ্গের সমস্ত এলাকাকেই কভার করা হবে। সাধারণত ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তুলে বাঘের শুমারি করা হয়। বাঘের পিঠে যে ডোরাকাটা দাগ থাকে, তা স্বতন্ত্র। তাই সমস্ত ছবি বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা বের করা হয়। কিন্তু, ভল্লুকের গণনা খুবই কঠিন কাজ। কারণ, ছবি তুলে একে পৃথক করা সম্ভব নয়। তাই এর জন্য একমাত্র রাস্তা সংগ্রহ করা নমুনার DNA Test।
রাজ্য বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের যেসব স্থানে কালো ভাল্লুক থাকে, সেই এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে ২০০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। সেই সব সেক্টরের একটি জায়গায় ভাল্লুকের পছন্দের খাবার রাখা হচ্ছিল। ওই জায়গাটির চারিদিকে রাখা হয়েছিল সূক্ষ্ম কাঁটাতার যা ভাল্লুকের চোখে পড়েনি। অথচ, সেখানে থাকা খাবার খেতে গিয়েই খোঁচা খেতে হয়েছে তাদের। তার ফলে কারও লোম, কারও-বা এক চিলতে রক্ত-মাংস লেগে গিয়েছে ওই সব কাঁটাতারে। সেই সব জায়গা থেকেই পাওয়া গিয়েছে নমুনা। ওইসব নমুনাই সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।