নিজস্ব প্রতিনিধি: দলের বড় আশা ছিল, কাঁথি(Contai Constituency) আসবে পদ্মের ঝুলিতে। কিন্তু সেই আশায় নিজের মুখে ছাই ঢেলে দিয়েছেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)। তিনি একদিকে যেমন জানিয়েছেন, ২৪’র ভোটে(General Election 2024) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে(Narendra Modi) তাঁর বাবা শিশির অধিকারীর(Sishir Adhikari) জেতা কাঁথি কেন্দ্রটি উপহার দিতে চান, তেমনি অন্যদিকে জানিয়েছেন, কাঁথিতে বিজেপি(BJP) না জিতলেও তৃতীয় বারের জন্য মোদিই প্রধানমন্ত্রী হবেন। অর্থাৎ তিনি চান, কাঁথিতে থেকে বিজেপি জিতুক, কিন্তু মুখ ফস্কে এটাও স্বীকার করে নিয়েছেন যে জয় সম্ভব নয়। আর তার এই বক্তব্যই এখন বঙ্গ বিজেপির অন্দরে হতাশা ছড়িয়ে দিয়েছে।
কেননা কাঁথি শুধু শুভেন্দুদের নিজেদের শহরই নয়, গোটা জেলা এবং অবিভক্ত মেদিনীপুর ছিল তাঁদের খাস তালুক। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দু যদি নিজেই স্বীকার করে নেন যে, কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির জয় সম্ভব নয়, তাহলে কে আর সেখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়তে চাইবে আর কেই বা বিজেপিকে ভোট দিতে এগিয়ে আসবে! কার্যত ভোটের আগেই কাঁথিতে হার মেনে নিলেন শুভেন্দু। আর সেটাই হতাশ করেছে বিজেপিকে।
উনিশের ভোটের সময় শুভেন্দু ছিলেন তৃণমূলেই। সেই নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে কাঁথি থেকে জিতেছিলেন শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী। শুধু তাই নয়, তমলুক থেকে তৃণমূলের টিকিটেই জিতেছেন শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে অধিকারী পরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বাড়ে। এখন খাতায়কলমে দলের সাংসদ হলেও, নামেই তৃণমূলে আছেন শিশির। একই অবস্থা দিব্যেন্দুরও। সূত্রে জানা গিয়েছে, বঙ্গ বিজেপির তরফে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তমলুকে দিব্যেন্দুকেই টিকিট দিতে।
কাঁথির জন্য শুভেন্দুর অপর ভাই সৌমেন্দুর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মাঝেই বিপত্তি বাঁধিয়েছেন শুভেন্দু। শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মন্দারমণিতে সভা থেকে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে আমরা কাঁথির আসনটি উপহার দেব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।’ তবে এর পাশাপাশি শুভেন্দু স্পষ্ট করে দেন, কাঁথিতে বিজেপি না জিতলেও তৃতীয় বারের জন্য মোদীই প্রধানমন্ত্রী হবেন। ভাষণে শুভেন্দুর বলা ‘না জিতলেও’ শব্দবন্ধটি নিয়ে গোল বেধেছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি কাঁথিতে জেতা নিয়ে কোনও সংশয় রয়েছে বিরোধী দলনেতার মনে?
সংশয় কোথায়? গত লোকসভা নির্বাচনে কাঁথিতে তৃণমূল(TMC) পেয়েছিল ৫০.৩০ ভোট। আর বিজেপির ঝুলিতে আসে ৪২.৪০ শতাংশ। শিশির জিতেছিলেন ১ লাখ ১১ হাজার ৬৬৮ ভোটে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অধিকাংশ বিধানসভাতেই বিজেপি জিতেছে। সাতটির মধ্যে চারটিতে জয় পেয়েছিল বিজেপি। বাকি তিনটিতে দ্বিতীয় স্থানে। তার নিরিখে কাঁথি লোকসভা আসনে তাঁরা খানিকটা এগিয়েই রয়েছেন বলে মত শুভেন্দুর। যদিও সেই সমীকরণ এখন অনেক বদলে গিয়েছে। গত পুরভোটে কাঁথিতে খারাপ ফল করেছে বিজেপি। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের পঞ্চায়েতগুলিতেও যে একচেটিয়া ভাল ফল হয়েছে, তা-ও বলা যাবে না। সেখানেও শাসক তৃণমূলের সঙ্গে সমানে সমানে চক্কর চলেছে। এর পরেও কাঁথির সব বুথে এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি হয়নি।
কাঁথি লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভায় ১,৬০০ র কাছাকাছি বুথ রয়েছে। তার মধ্যে এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি ৭০ থেকে ৭২টি বুথে। মূলত সংখ্যালঘু এলাকায় এই সমস্যা রয়েছে বলে দাবি দলীয় সূত্রের। এই অবস্থায় জয় যে সম্ভব নয় সেটাই প্রকারন্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন শুভেন্দু। শিশিরপুত্রের সত্য কথনের জেরে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র তথা পূর্ব মেদিনীপুরে দলের বিশেষ দায়িত্বে থাকা কুণাল ঘোষ(Kunal Ghosh) জানিয়েছেন, ‘শুভেন্দুর মুখ ফস্কে আসল কথাটা বেরিয়ে গিয়েছে। কাঁথি যে জিতবে না সেই সংশয় প্রকাশ করে ফেলেছেন। তার পর যে উপহারের কথা বলছেন, ওটা মেকআপ দেওয়ার জন্য। শুভেন্দু নিজেও জানেন, কাঁথি হারবেন।’