নিজস্ব প্রতিনিধি: লোকসভা নির্বাচনের(General Elections 2024) মুখে বাংলার জঙ্গলমহলের(Jungalmahal) বুকে পর পর ধাক্কা খেয়ে চলেছে পদ্মশিবির, থুড়ে বিজেপি(BJP)। দল ছেড়েছেন ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই নেমে এল আরও বড় ধাক্কা। আদিবাসী কুড়মি সমাজের(Adibasi Kurmi Samaj) তরফে সংগঠনের মুখ্য উপদেষ্টা অজিতপ্রসাদ মাহাত জানিয়ে দিয়েছেন, ২৪’র ভোটে তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করবেন না। অর্থাৎ বিজেপির দিকে থাকছে না তাঁদের কোনও সমর্থন। শুধু তাই নয়, জঙ্গলমহলের ৫টি আসনেই নিজেরা প্রার্থী দিচ্ছেন তাঁরা। আর এই সিদ্ধান্ত তথা ঘোষণা বিজেপির ঘুম কেড়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কেননা উনিশের ভোটে বাংলার মাটি থেকে বিজেপি যে ১৮টি আসন জিতেছিল, তার মধ্যে ছিল জঙ্গলমহলের ৫টি আসনও। সেই আসনগুলি হল – পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম। এই ৫টি লোকসভা কেন্দ্রে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোটার কুড়মি সমাজের। এবার সেই ভোটই হাতছাড়া হচ্ছে বিজেপির।
পুরুলিয়া শহরের বুকে থাকা এরোড্রাম সংলগ্ন হুলহুলির টাঁড় এলাকায় গত ৮ মার্চ শুরু হয়েছিল আদিবাসী কুড়মি সমাজের সম্মেলন। ৩ দিনের সেই সম্মেলন শেষ হয়েছে গতকালই অর্থাৎ ১০ মার্চ। সেই সম্মেলন শেষেই অজিতপ্রসাদ সংগঠনে গৃহীত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক হয়েছে, পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে আদিবাসী কুড়মি সমাজ নির্দল প্রার্থী দেবে। এছাড়াও বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরেও সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্দল প্রার্থী দেওয়া হবে। প্রার্থী দেওয়া হবে বালুরঘাট এবং দিনাজপুরে। তবে ঝাড়গ্রামে অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে প্রার্থী দেওয়া হবে। কোনও রাজনৈতিক দলকেই সমর্থন করবে না আদিবাসী কুড়মি সমাজ। রাজনৈতিক দলের চামচাবাজিও আর করবে না। সেই সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের সাধারণ আসনগুলিতেও সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রার্থী দেওয়া হবে বলে জানান অজিতবাবু। ওড়িশাতে ভোট বয়কটেরও ডাক দেন তিনি।
লক্ষ্যণীয় ভাবে অজিতবাবু রীতিমত তোপ দেগেছেন মোদি সরকার ও বিজেপিকে। তিনি জানিয়েছেন, ‘বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেস কুড়মিদের জন্য কিচ্ছু করেনি। স্বাধীনতার এত বছর পরেও কুড়মিরা মুক্তি পায়নি। বিজেপি আমাদের জন্য কিছু করেনি। বিজেপি চাইলে কোনও রেজোলিউশ্যনশন ছাড়াই কুড়মিদের এসটি তালিকাভুক্ত করতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। তৃণমূল কংগ্রেস একবার চিঠি পাঠিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ওই চিঠি ফেরত আসার পর আর কোনও চিঠি পাঠায়নি। এত বছর ধরে কুড়মিরা কখনও দিদি জিন্দাবাদ, কখনও দাদা জিন্দাবাদ করেছে। কিন্তু এবার শুধুমাত্র কুড়মি জিন্দাবাদ বলার সময় এসেছে। রাজনৈতিক দল করা মানে গোলামি করা। এই গোলামি থেকে মুক্তি চাই। গ্রামে যাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল করেন তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁরা ছেলেমেয়েদের বিয়ে কী করে দেন তা আমাদের দেখতে হবে।’
বস্তুত, কুড়মি সমাজের এই সিদ্ধান্ত তৃণমূলের(TMC) কাছে কোনও ধাক্কা নয়, কিন্তু বিজেপির কাছে বড় ধাক্কা। কেননা এই কুড়মি সমাজের ভোট উনিশের লোকসভা নির্বাচনে গিয়েছিল বিজেপির ঝুলিতে। কিন্তু গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই আদিবাসী কুড়মি সমাজ নির্দল প্রার্থী দিতে শুরু করে দিয়েছে। তাতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। বরঞ্চ লাভের ফসল ঘরে তুলেছে তৃণমূল। ২৪’র ভোটে তাই জঙ্গলমহলের ৫টি লোকসভা কেন্দ্রই বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে কোমর বাঁধছে জোড়াফুল। তবে এটাও ঘটনা যে আদিবাসী কুড়মি সমাজ পঞ্চায়েত নির্বাচনে পৃথক প্রার্থী দিলেও তাঁদের মধ্যে খুব কমজনই জয়ী হয়েছিলেন। একই সঙ্গে কুড়মি ভোট পেয়ে তৃণমূলের প্রার্থীরা ঢ্যাং ঢ্যাং করে জিতে গিয়েছেন। অর্থাৎ আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতারা মুখে যে দাবিই করুন না কেন কুড়মি সমাজ সচেতন হয়ে গিয়েছেন। তাঁরা তাঁদের নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন এবং আগামী দিনেও করবেন।