নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল, লাগলো যে দোল’, এই গান দিয়েই কবিগুরুর(Rabindranath Tagore) শান্তিনিকেতনে(Shantiniketan) প্রতিবছর শুরু হয় বসন্ত উৎসব(Basanta Utsab)। কিন্তু বিদ্যুৎ জমানায় সেই বসন্ত উৎসবের দরজাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল পর্যটক আর আশ্রমিকদের জন্য। গতকালই সেই বিদ্যুৎ জমানাত অবসান ঘটেছে। মানে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের(Viswa Bharati University) উপাচার্য পদে মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মতো কলাভবনের অধ্যক্ষ তথা অধ্যাপক সঞ্জয় মল্লিক এখন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। বিদ্যুৎ বিদায় সম্পন্ন হতেই গতকাল থেকেই শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতী ও বোলপুরজুড়ে রীতিমত উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালেও সেই উৎসবের আমেজ বজায় রেখে শান্তিনিকেতনের ছাতিমতলায় প্রতীকী উপাসনার আয়োজন করা হয়। দীর্ঘদিন বাদে সেই উপাসনায় এদিন যোগ দিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা ও শান্তিনিকেতনের প্রবীণ আশ্রমিকেরা।
বিদ্যুৎ জমানায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকদের সম্পর্কের অবনতি হয়। বলা চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনও উৎসব থেকেই কার্যত ব্রাত্য হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। বিদ্যুৎ জমানার অবসান ঘটতেই তাঁদের সেই ব্রাত্য দশারও অবসান ঘটেছে। এদিন সকালে তাই খুশির হাওয়ায় উৎসবের আমেজে মাতলেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার সকালে বৈদিক মন্ত্র পাঠ করে ছাতিমতলায় প্রতীকী উপাসনা করেন তাঁরা। রবীন্দ্রভবনের সামনে থেকে উপাসনাগৃহ পর্যন্ত মিছিলও করেন। রবীন্দ্র সংগীতের সুরে ভরে ওঠে আকাশ বাতাস। শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতেই প্রতীকী উপাসনার আয়োজন বলেও জানান প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকরাও। গতকাল বিদ্যুৎ বিদায়ের বার্তা ছড়িয়ে পড়তেই শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতী ও বোলপুরজুড়ে বিদ্যুৎ ‘বিরোধীরা’ মিষ্টি বিলি করেছিলেন। এদিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একই সঙ্গে এদিন বিশ্বভারতীর প্রাক্তনীরা এবং শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকেরা সবাই একযোগে সরব হয়েছেন পৌষমেলাকে(Poush Mela) ফের আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনার জন্য। সরব হয়েছেন বসন্ত উৎসবের দরজা সকলের জন্য খুলে দিতে।
উপাচার্য থাকাকালীন একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। আশ্রমিকদের একাংশের মতে, বিশ্বভারতীর গৈরিকীকরণের চেষ্টা করেন প্রাক্তন উপাচার্য। যার ফলে বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য ক্ষুন্ন হয়েছে। সেই ঐতিহ্য ফের ফিরিয়ে আনাই এখন লক্ষ্য প্রাক্তনী এবং প্রবীণ আশ্রমিকদের। তাঁদের দাবি, পৌষ মেলা শুধু শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যই নয়, বোলপুর তথা বীরভূমের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তিও। বিদ্যুত জমানায় সেই পৌষ মেলা বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। দ্রুত তা চালু করা উচিত। চলতি বছরের বড়দিনের সময়েই যাতে ফের পৌষ মেলা তার আগের জায়গাতেই চালু হয় এদিন তার দাবি তুলেছেন আশ্রমিকেরা। সেই সঙ্গে বসন্ত উৎসবকেও সর্বজনের মাঝে ফের ফিরিয়ে দিতে দোল পূর্ণিমার দিনেই তা ফের চালুর আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। যদিও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও এই দুটি বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে সূত্রে জানা গিয়েছে, যতদিন না বিশ্বভারতীতে পূর্ণ সময়ের উপাচার্য কেউ আসছেন ততদিন এই দুটি বিষয় নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব অধ্যাপক, কর্মী ও পড়ুয়ারা পৌষ মেলা চালুর পক্ষে। তেমনি বসন্ত উৎসবেও সবার জন্য দরজা খুলে দেওয়ার পক্ষপাতী তাঁরা।