নিজস্ব প্রতিনিধি: মানবিকতার খাতিরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। প্রায়শই দিতেন ৫০০ কী ১০০০ টাকা। নকল পায়ের জন্য ১৫ হাজার টাকা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু রাতারাত সেই টাকা চাইতে হাজির হয়েছিল অভিযুক্ত। সেই টাকা দিতে না পারায় গলায় শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় তাঁকে। অর্থাৎ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন যার দিকে সেই জীবন কেড়ে নিয়ে চলে গেল। উত্তর ২৪ পরগনা(North 24 Pargana) জেলার ব্যারাকপুর মহকুমার ইচ্ছাপুর(Icchapur) এলাকায় এক বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়। গত রবিবার রাতে উত্তর ব্যারাকপুর(North Barracpur) পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিজে বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল ৭২ বছরের সিক্তা চট্টোপাধ্যায়ের গলাকাটা মৃতদেহ। সেই ঘটনায় পুলিশ অঞ্জন চৌধুরী নামে এক মাদকাসক্ত প্রতিবন্ধী ভিখারিকে(Beggar) গ্রেফতার করল পুলিশ।
জানা গিয়েছে, সিক্তাদেবী বাড়িতে একাই থাকতেন। তাঁর একমাত্র মেয়ে থাকে পুণায়। সিক্তাদেবী এমনিতে খুব মিশুকে ছিলেন। সেই সঙ্গে পাড়ার ও এলাকার অসহায়, দুঃস্থদের প্রায়শই টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করতেন। সেই সূত্রেই সিক্তাদেবীর বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু হয় অঞ্জনের। মাদকাসক্ত অঞ্জনের কয়েক বছর আগে একটি দুর্ঘটনা হয়েছিল। নেশার ঘওরে রেললাইনে উঠে আসায় ট্রেনের ধাক্কায় সে আহত হওয়ার পাশাপাশি তার একটি পাও কাটা পড়ে। অঞ্জন প্রায়শই আসত সিক্তাদাবীর কাছে। মানবিকতার খাতিরে সিক্তাদেবী তাকে ৫০০ বা ১০০০ টাকা করে দিতেন। এমনকি নকল পা লাগাবার জন্য ১৫ হাজার টাকা দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সিক্তাদেবীর মেয়ে ও পাড়াপ্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে সেকথা জানতে পেরেছিল পুলিশ। গত রবিবার মাঝরাতে সিক্তাদেবীর গলাকাটা দেহ তাঁর বাড়ির মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন।
সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে। তার জেরেই সামনে আসে মাঝরাতে সিক্তাদেবীর আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল অঞ্জন। এরপরেই তার সন্ধান শুরু করে পুলিশ। শেষে মঙ্গলবার রাতে চাকদহ থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। জেরায় সে পুলিশের কাছে কবুল করে যে রবিবার রাতে ১৫ হাজার টাকা চাইতেই সে সিক্তাদেবীর বাড়িতে গিয়েছিল। কিন্তু সিক্তাদেবী তাঁকে সেই টাকা দিতে চাননি। কেননা তিনি জানতে পেরেছিলেন অঞ্জন তাঁর কাছ থেকে খাবার কেনার জন্য নিয়মিত টাকা নিয়ে গেলেও সেই টাকায় সে খাবার না কিনে মাদক কিনত। তাই তাকে আর টাকা দিতে চাননি সিক্তাদেবী। আর তাই রবিবার রাতে সিক্তাদেবীর সঙ্গে অঞ্জনের বচসা বাঁধতেই সিক্তাদেবীর গলায় শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করে অঞ্জন। সিক্তাদেবীর মৃত্যু নিশ্চিত করতে বাড়িতে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে তাঁর গলার নলি কেটে দেয় অঞ্জন। পুলিশ বুধবার অঞ্জনকে আদালতে পেশ করছে।