নিজস্ব প্রতিনিধি: এক আধ কোটি টাকা নয়, ২২২ কোটি টাকা(222 Crore Rupees)। এই বিপুল পরিমাণ টাকা খরচই করতে পারেনি রাজ্যের পূর্ব বর্ধমান(Purba Burdwan) জেলার উন্নয়নের দায়িত্বে থাকে সেখানকার জেলা পরিষদ(Zilla Parishad)। এই টাকা পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের(15th Finance Commission) টাকা। সম্প্রতি রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর(Panchayat and Rural Development Department) রাজ্যের প্রতিটি জেলাকেই নির্দেশ দিয়েছিল, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রাপ্য টাকার ৬০% খরচ করার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ তা পূরণ করতে পারেনি। জেলার গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলি লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি গেলেও জেলা পরিষদ অনেকটাই দূরে থেকে গিয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সম্মিলিত ভাবে খরচ না হওয়া টাকার পরিমাণ ১১৯ কোটি ১২ লক্ষ। এর বাইরে আবার পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের এ বছরের প্রথম কিস্তি বাবদ আরও ১০৩ কোটি টাকা জেলায় ঢোকে। সব মিলিয়ে অব্যবহৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২২ কোটি টাকা।
জেলার আধিকারিকদের দাবি, ফি বছর নির্দিষ্ট সময় কেন্দ্র থেকে উন্নয়নের জন্য টাকা আসে জেলায়। অথচ বছর শেষে সেই টাকা খরচ করতে পারে না পঞ্চায়েতের কোনও স্তরই। আর এই অব্যবহৃত টাকাই এখন চিন্তা বাড়াচ্ছে জেলা প্রশাসনের। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা যাতে ঠিক ভাবে খরচ হয়, সেখানে যাতে কোনও রকমের অনিয়ম ও দুর্নীতি বাসা না বাঁধে তার জন্য নবান্ন থেকে প্রতিটি জেলার নিত্যদিনের খরচে নজরদারি চালানো শুরু করেছে জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের আইএসজিপি সেল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তারপরেও অব্যবহৃত টাকার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। নিয়মানুযায়ী এই টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খরচ না হলে তা কেন্দ্রের কাছে ফেরত চলে যাবে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অবশ্য দাবি, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ঢিলেমির জন্য লক্ষ্যমাত্রা থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। আবার বেশ কিছু বিডিওর নজরদারির অভাব, ঠিকাদারের বিল ব্লক অফিসে দীর্ঘ দিন পড়ে থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের আবার দাবি, পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের কাজে সবাই ব্যস্ত ছিল। তা ছাড়া জেলা পরিষদের বোর্ড গঠন, ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার না থাকায় পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কাজে গতি ছিল না। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের আবার দাবি, জেলা থেকে বার বার দরপত্র ডেকে কাজ শুরু করার কথা বলা হলেও অর্থের উপ-সমিতির অনুমোদন ছাড়া কিছু করা যায় না। উপ-সমিতি গঠনে দেরি হওয়ার ফলে টাকা থাকলেও কাজ শুরু করা যায়নি। এখন জেলায় ৯৬% পঞ্চায়েতে উপ-সমিতি গঠন হয়ে গিয়েছে। তাই কাজও দ্রুত শুরু হয়ে যাবে।
নবান্নের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের গোড়ায় পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কাছে ছিল ৫১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা। পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েতের কাছে ছিল যথাক্রমে ৪২ কোটি ৬৬ লক্ষ ও ১৬০ কোটি ৪২ লক্ষ। এখন ওই তিনটি স্তরে পড়ে রয়েছে যথাক্রমে ৩৫ কোটি ৫৬ লক্ষ, ১৮ কোটি ৭ লক্ষ ও ৬৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ১১৯ কোটি ১২ লক্ষ। এই হিসাব গত বুধবারের। মঙ্গলবার সেখানে ছিল ১২০ কোটি ৩১ লক্ষ। অর্থাৎ এক দিনে খরচ হয়েছে ১ কোটি ১৯ লক্ষ। অথচ দৈনিক খরচের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি টাকারও বেশি যা ছোঁয়া যায়নি। নবান্নের দাবি, খরচ করা নিয়ে এ বার জনপ্রতিনিধিদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তারপরেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।