নিজস্ব প্রতিনিধি: ফরাক্কা বাঁধ(Farakka Barrage) তৈরি হওয়ার পর থেকে মালদা(Malda) ও মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গা ভাঙন(Ganga River Erosion) সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। সেই সমস্যার জেরে লক্ষাধিক মানুষ কার্যত তাঁদের ভিটে, মাটি, জমি, বাগান হারিয়ে সর্বহারায় পরিণত হয়েছেন। কথায় বলে নদী এক কূল ভাঙে তো অপর কূল গড়ে। সেই কথার বাস্তাবায়ন ঘটিয়েই দেখা যাচ্ছে গঙ্গার বুকে জেগে উঠেছে একের পর এক চরা। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে জেগে ওঠা সেই সব চরার মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে দুই রাজ্যের মধ্যেই। যেহেতু ভাঙনের জেরে এই চরগুলির জন্ম হয়েছে তাই সেখানে ভাঙনে ভিটে-জমি হারা মানুষগুলি গিয়ে ঠাঁই নিয়েছে। আবার কিছু চরে ঝাড়খণ্ডের কৃষকেরাও চাষ করছে। যে সব চরে বাংলার(Bengal) মানুষের বসবাস তাঁদের কাছে এবার সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিতে চাইছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। এই পরিষেবার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। সেই দাবিকেই কার্যত মান্যতা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। আপাতত ঠিক হয়েছে ৬টি চরে সমীক্ষা(Survey) করা হবে। তাতে লাভবান হবেন আড়াই লক্ষ মানুষ।
আরও পড়ুন সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেওয়া নিয়ে কড়া নির্দেশ
মালদার বুকে বিভিন্ন এলাকা দফায় দফায় গঙ্গা ভাঙনের শিকার হয়েছে। প্রচুর জমি তলিয়ে গিয়েছে নদীতে। পরবর্তীতে অনেকটা জমি চর হয়ে জেগে উঠেছে। এরকম প্রায় ৩০টি চর রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তার মধ্যে অন্তত ৬টি চরে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ বসবাস করেন। তাঁদের জমির রেকর্ড এখনও পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে। ঝাড়খণ্ড সরকার পরবর্তীতে তাঁদের আধার কার্ড সহ কিছু নথি দিলেও স্থায়ী সরকারি চাকরি বা উচ্চশিক্ষা সহ বেশ কিছু সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ওই চরগুলির বাসিন্দারা। তাই তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী নাগরিক হিসেবে মান্যতা দেওয়ার দাবি তুলে আসছেন। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ভূমি রাজস্ব আইনে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছিল। তাতে চরের জমির স্বত্ত্ব হারান সেখানকার বাসিন্দারা। এখন তাঁরা চান পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাম আমলের ওই আইন বিলোপ করে তাঁদের হাতে জমির মালিকানা সত্ত্ব প্রদান করুক এবং তাঁদের রাজ্যের বাসিন্দা হিসাবে স্বীকৃতি দিক।
আরও পড়ুন সেচের প্রয়োজনে ও বন্যা ঠেকাতে ১৪৩৫ কোটি টাকায় খাল সংস্কার
নবান্নের আধিকারিকদের দাবি, বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমান্তে গঙ্গার বুকে জেগে ওঠা চরের মালিকা নিয়ে দুই রাজ্যের বিবাদ রয়েছে। সেই বিবাদের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত জমির মালিকানা সত্ত্ব প্রদান করা সম্ভব নয়। তবে সেখানকার বাসিন্দাদের এ রাজ্যের বাসিন্দা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। তার জন্যই ৬টি চরে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। সমীক্ষার পরে সেখান রাজ্য সরকারের পরিষবাও পাবেন সেখানকার বাসিন্দারা। মিলবে স্বাস্থ্যসাথী থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী থেকে রূপশ্রী, মেধাশ্রী থেকে ঐক্যশ্রী, খাদ্যসাথী থেকে সবুজসাথী, জয় জহর থেকে জয় বাংলার মতো সমস্ত প্রকল্প। সেখানকার বাসিন্দারা ১০০ দিনের কাজ সহ আবাস যোজনার সুবিধাও পাবেন। মালদা জেলার কালিয়াচক-২ ব্লকের তলিয়ে যাওয়া কেবি ঝাউবোনা অঞ্চলে সমীক্ষা শুরু হচ্ছে। ওই অঞ্চলটি এখন চর হিসেবে জেগে উঠেছে।