নিজস্ব প্রতিনিধি: করোনা কালে লকডাউনের সুযোগেই কিছু মানুষকে হয়তো ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা। তাই রোগী হয়ে ঢুকে, বালুরঘাট হাসপাতালের আবাসিক হয়েই থেকে গিয়েছেন একদল রোগী। ২০২০ সালে লকডাউন শুরু হতেই, বালুরঘাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে, কয়েকজন রোগীকে হাসপাতালে দিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ দু’বছর ধরে তারা রয়ে গিয়েছেন হাসপাতালেই। যদিও আর কয়েকজনকে অবশ্য হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এখনও চারজন থেকেই গিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে তারা প্রত্যেকেই শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেও, তাদের আর বাড়ি ফেরাতে চাননি আত্মীয়রা। খবরও নেন না কেউই।
এই সমস্ত রোগীদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হলেও, তাদের আত্মীয়দের তরফ থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। ফলে হাসপাতালই এখন একমাত্র ঠিকানা ওইসব অসহায় মানুষদের। বর্তমানে তাদের আইসোলেশন ওয়ার্ডের দোতলাতে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এখন সেখানেই ওই রোগীরা থাকেন। হাসপাতালের খাবার খান, হাসপাতালেরই পোষাক পরেন। আর সেখানেই ঘুমান। কিন্ত কোনও রোগীকে কি বছরের পর বছর, এভাবে রেখে দেওয়া যায়, এই প্রশ্নের উত্তর এদিন মেলেনি।
বছর ৮২-র বৃদ্ধ লোকেন সরেন। হাসপাতালের তথ্য ঘাটলে দেখা যায় বালুরঘাট শহর লাগোয়া মালঞ্চা গ্রামের বাসিন্দা লোকেশ সরেনকে ২০২০ সালের লকডাউন এর সময় শারিরিক দুর্বলতা ও জ্বর নিয়ে কেউ বা কাহারা হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে গিয়েছিল। বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে মেইল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকতেই কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে তার পরিবারের লোকের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফলে তাকে আর হাসপাতাল থেকে বের করাও যায়নি।
একইভাবে পারপতিরাম এলাকার ঠিকানা দেওয়া ৫২ বছর বয়সী ফুজলুকেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রেখে দিতে বাধ্য হয়েছে। তাঁরও পরিবারের পক্ষ থেকে কেউই আর খোঁজখবর নিতে আসেনি। লকডাউনের সময় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যাবার পর থেকে, আর তাঁর পরিবারের লোকেদের খোঁজ মেলেনি।
হাসপাতালের রেকর্ডে লোকেন ও ফুজলুর তাও কিছু ঠিকানা দেখা যাচ্ছে, কিন্তু ৩২ বছর বয়সী এক যুবকের তো কিছুই তথ্য মিলছে না। ওই যুবক কথা বলতে পারে না। তার সম্পর্কে কিছুই জানে না। ফলে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবেই থেকে গিয়েছে ওই যুবক। তাকেও লকডাউনের সময় কেউ হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েই চলে গিয়েছিল। আর এই গোটা বিষয়টা এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একটা বড়সড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।