নিজস্ব প্রতিনিধি: নিজেকে বাঁচাতে লোকলজ্জার মাথা খেয়ে রবীন্দ্র ঐতিহ্য ধ্বংস করে এ বছর শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার আয়োজন না করার দায় রাজ্য সরকারের ঘাড়ে ঠেলে দিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। আর উপাচার্যের এহেন দাবি ও তার পিছনে থাকা যুক্তি শুনে শুধু যে শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকেরাই ক্ষুব্ধ হলেন তাই নয়, ক্ষুব্ধ হলেন রবীন্দ্রপ্রেমিকরাও। কার্যত বিদ্যুতের নির্লজ্জ যুক্তি শুনে এখন সর্বত্রই ছিঃ ছিঃ কার পড়ে গিয়েছে। কার্যত সব মহলেই এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে গোটা ঘটনার পিছনে গেরুয়া শিবিরের যে নির্দেশ রয়েছে তাকেই কার্যত বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন বিদ্যুৎ। শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী থেকে একের পর এক রবীন্দ্র ঐতিহ্য ধ্বংস করে সেখানে হিন্দুত্ববাদের কেতন ওড়াতে চাইছে গেরুয়া শিবির যার শিকার হল পৌষমেলা।
বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনের ছাতিম তলায় পৌষ উৎসবের সূচনা হয়েছে যথাযথ রীতি মেনেই। তবে এবারেও আয়োজিত হয়নি পৌষমেলা যা এই পৌষ উৎসবের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই নিয়ে পর পর দুই বছর এই মেলার আয়োজন বন্ধ রাখল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। পৌষমেলা না হওয়ায় মন খারাপ বিশ্বভারতী ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি বোলপুরের বাসিন্দাদের, শান্তিনিকেতনের বাসিন্দাদের এবং অবশ্যই রবীন্দ্র প্রেমিকদের। এখন সব মহলেই অভিযোগ উঠেছে, ইচ্ছাকৃত ভাবে নানা পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পৌষমেলা বন্ধ করে দেওয়ার পথে হাঁটা দিয়েছে। আর সেই ঘটনার পিছনে রয়েছে গেরুয়া শিবিরের প্রত্যক্ষ নির্দেশ যা বিদ্যুৎ পালন করে চলেছেন। সেই ঘটনায় কার্যত শিলমোহর দিয়েছে এদিন পৌষ উৎসবের সূচনার অনুষ্ঠানে বহু বিতর্কিত কেন্দ্র সরকারের শিক্ষানীতি বিষয়ে বিদ্যুতের সাওয়ালে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ বিশ্বভারতীর প্রাক্তনীদের পাশাপাশি রবীন্দ্র প্রেমিকেরাও।
এদিন সকালে ছাতিমতলায় উপাসনার মাধ্যমে পৌষ উৎসবের সূচনা করা হয়। সেখানে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী জানান, ‘আমরা পৌষমেলা করার জন্য অক্টোবর মাস থেকেই উদ্যোগী হয়েছিলাম। অনুমতি নেওয়ার জন্য প্রথমে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। এর পর রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি পাঠাই আমরা। তার পর তাঁদেরকে তিন বার বিষয়টি মনে করানোও হয়েছিল। স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি লেখার পরেও কোনও উত্তর মেলেনি। তাই আমরা পৌষমেলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ বিদ্যুতের এহেন সাফাই ঘিরে এখন বিতর্ক ছড়িয়েছে নানা মহলে। তবে মন্দের ভালো এটাই যে, শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা না হলেও বোলপুরে ডাকবাংলো মাঠে রবীন্দ্র-ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্যই বিকল্প মেলার আয়োজন করেছে রাজ্য সরকার। এদিন থেকেই শুরু হচ্ছে সেই মেলা, যা চলবে ১১ পৌষ পর্যন্ত। পৌষমেলার ঢঙেই আয়োজন করা হয়েছে ওই মেলার। এদিন পৌষ উৎসবের সূচনা করতে গিয়ে বিদ্যুৎ যেভাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নিউ এডুকেশন পলিসির গুণগান করেছেন তা নিয়ে রীতিমত ক্ষোভ ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, রবীন্দ্র ঐতিহ্যবাহী ছাতিমতলার মঞ্চকে উপাচার্য কেন কেন্দ্রীয় সরকারের বন্দনায় ব্যবহার করছেন? অনেকেই একে ‘অপরাধ’ বলে চিহ্নিত করতেও পিছুপা হচ্ছেন না। একই সঙ্গে ক্ষোভ ছড়িয়েছে ব্যবসায়ী মহলেও।