নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে মতুয়া প্রভাবিত ২ কেন্দ্র হল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার(North 24 Pargana) বনগাঁ(Bongna Constituency) এবং নদিয়া জেলার রানাঘাট। উনিশের ভোটে এই ২ কেন্দ্রই গিয়েছিল বিজেপির দখলে। একুশের ভোটেও এই ২ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা ১৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১২টিই যায় বিজেপির দখলে। কিন্তু এবার সেই ২ কেন্দ্রেই ছবি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। বিশেষ করে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে। সেখানে বিজেপির তরফে এবারেও প্রার্থী হয়েছে কেন্দ্রের জাহাজ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর(Shantanu Thakur)। তিনি আবার মতুয়া সমাজের প্রাণকেন্দ্র ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির বড় ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে আবার তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন বিশ্বজিৎ দাস(Biswajit Das)। তিনি একুশের ভোটে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা বাগদা বিধয়ানসভা থেকে পদ্মপ্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়েছিলেন। এখন বিজেপি(BJP) ছেড়ে তৃণমূলের(TMC) প্রার্থী হয়েছেন। এখন এই দুইজনকেই বেশ চাপে ফেলে দিয়েছেন মতুয়া সংগঠনের নির্দল প্রার্থী সুমিতা পোদ্দার(Sumita Poddar)। ‘শ্রী শ্রী শান্তিহরি গুরুচাঁদ মতুয়া ফাউন্ডেশন’ সমর্থিত এই নির্দল প্রার্থী কোন ফুলের ভোটে থাবা বসাবেন সেটাই এখন ভাবাচ্ছে সবাইকে।
সুমিতা অবশ্য প্রচারে বেড়িয়ে বার আবার আক্রমণ শানছেন শান্তনুর পাশপাশি বিজেপিকে। পদ্ম শিবিরের নেতারাও তাই পাল্টা দাবি করছেন যে, সুমিতা আদতে তৃণমূলের মেয়ে। তা প্রচারে বেড়িয়ে কী বলছেন সুমিতা? এই নির্দল প্রার্থীর দাবি, ‘গত পাঁচ বছরে এখানকার সাংসদ কোনও কাজ করেননি মতুয়াদের জন্য। ঠাকুরবাড়ির জন্যও তাঁর কাজকর্ম শূন্য। যা করেছেন শুধু নিজের স্বার্থে। ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক থাকা শান্তনু ঠাকুরকে সাংসদ হিসেবে গত পাঁচ বছর দেখেছেন মতুয়ারা। ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করা ছাড়া কোনও উন্নয়নের কাজ করেননি। অনেক হয়েছে, এবার রক্তের সম্পর্কের দোহাই আর চলবে না। সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য মতুয়াদের আশীর্বাদ নিয়ে লড়ছি। ভোট এলেই নাগরিকত্ব নিয়ে প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু ভোট মিটলে সব শেষ! আমাদের একটাই দাবি, নিঃশর্ত নাগরিকত্ব।’
মতুয়া প্রভাবিত বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে জয় বা পরাজয়ের ক্ষেত্রে মতুয়া-নমঃশূদ্র ভোটাররাই বড় ফ্যাক্টর। গত লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া সহ উদ্বাস্তুদের জন্য নাগরিকত্বের তাস খেলে বাজিমাত করেছিলেন শান্তনু। কিন্তু এবার শান্তনুর খাসতালুকেই মতুয়া সমর্থিত নির্দল প্রার্থী সুমিতা দাঁড়িয়ে যাওয়ায় সেই ভোট তিন ভাগ হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। তাতে তৃণমূলে লাভ নাকি বিজেপির লাভ এখন সেটাই হিসাব কষছেন পদ্মফুল আর ঘাসফুলের নেতারা। সুমিতা অবশ্য হাত গুটিয়ে বসে থাকছেন না। নিত্যদিনই অনুগামীদের নিয়ে ডঙ্কা, কাঁসর সহ লাল-সাদা নিশান নিয়ে মিছিল করছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন সুমিতা। শান্তনুর অনুগামীদের দাবি, সুমিতা মতুয়াদের কোনও ভোটই পাবেন না। যদিও এলাকাবাসীর দাবি, সুমিতা শান্তনুর ঘরেই সিঁদ কেটে দিয়েছেন। বিজেপির ভোট কেটে তিনি তৃণমূলকে সুবিধাই করে দেবেন।