নিজস্ব প্রতিনিধি: ধুন্ধুমার পরিস্থিতি রাজ্যের ইস্পাতনগরী বলে পরিচিত দুর্গাপুর(Durgapur) শহরের মায়াবাজার(Maya Bazaar) এলাকায়। রেলের ফ্রেট করিডরের(Frate Corridor) জন্য রেলবস্তি উচ্ছেদ করতে গিয়ে বড়সড় বাধার মুখে পড়লেন বিজেপির বিধায়ক(BJP MLA) লক্ষ্মণ ঘোড়ুই(Lakshman Ghoroi)। শুধু তাই নয়, তাঁকে রীতিমত শুনতে হল Go Back Sloganও। ঘটনার সব থেকে বড় তাৎপর্য এটাই যে এদিন লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে সব থেকে বড় অভিযোগ উঠেছে যে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে তিনি এই রেলবস্তিতে এসেই ভোট চেয়েছিলেন। সেই সময়ে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে এই রেলবস্তিকে বৈধ কলোনির রূপ দিতে তিনি রেলকে অনুরোধ করবেন। কিন্তু এখন রেলেরই ফ্রেট করিডরের দোহাই দিয়ে তাঁদের কোনও পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণ না দিয়েই সোজা উচ্ছেদ করতে চলে এসেছেন। রেল যদি তাঁদের যথাযথ ভাবে পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ না দেয় তাহলে তাঁরা রেলের এই জমি ছাড়বেন না। আর এই বিক্ষোভের মুখে পড়ে শেষে রেল ও বিজেপির বিধায়ক বাধ্য হয়েছেন পিছু হঠতে।
আরও পড়ুন নির্মল বাংলা মিশনে কর্মী নিয়োগ ঘিরে উত্তপ্ত পুরুলিয়া পুরসভা
জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর পুরনিগমের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের মায়াবাজার সংলগ্ন এলাকায় রেলের জমিতে দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করছে একাধিক পরিবার। বিগত কয়েক মাস আগে সেই জমি থেকে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের নোটিশ দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। তবে বসবাসকারীদের দাবি ছিল, তাঁদের পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ দিয়ে সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হোক। একাধিক বার রেলের কাছে সেই দাবিও রেখেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, সে কথায় কর্ণপাত করেনি রেল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে রেলের আধিকারিকেরা রেল পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও বুলডোজার নিয়ে সেখানে চলে যান উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে। আর সেই সব কিছু দেখে রুখে দাঁড়ান রেলবস্তির প্রায় হাজার ২ বাসিন্দা। রেলের আধিকারিক, রেল পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের ঘুরে শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। তিনিও এদিন রেলের আধিকারিকদের সুরে সুর মিলিয়ে জমি খালি করে দিতে বলায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। বিধায়ককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি ওঠে Go Back শ্লোগান। ঘটনা ক্রমশই উত্তপ্ত হলে সেখানে আসে দুর্গাপুর-আসানসোল পুলিশ কমিশনারেটের বিশাল বাহিনীর পাশাপাশি দূর্গাপুরের মহকুমা শাসকও।
আরও পড়ুন মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে চালুর পথে নলহাটির উড়ালপুল
পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে এদিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য হন রেলের অধিকারীরা। এদিনের ঘটনার জেরে রেলবস্তির বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এই ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা লোকনাথ দাস জানিয়েছেন, ‘‘রাজ্য সরকার জোর করে উচ্ছেদ একদমই সমর্থন করে না। এটা রাজ্য সরকারের ঘোষিত নীতি। বাংলায় সবাইকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দেওয়া হয়। বিজেপি বিধায়ক কোনও দিন এলাকাবাসীর পাশে ছিলেন না। হঠাৎ করে আজ এসে নাটক করছেন!’ যদিও লক্ষ্মণ নিজে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এদিন বিক্ষোভের মুখে পড়ে পরে নিজের সুর বদল করে জানিয়েছেন, তিনি এলাকাবাসীর পাশেই আছেন। পুনর্বাসন দেওয়া না হলে তাঁদের তরফ থেকেও উচ্ছেদ করতে দেওয়া হবে না। যদিও রেলবস্তির লোকেরা বিধায়কের এই মুখের কথাকে এখন বিশ্বাসই করছেন না।