নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: কথায় বলে বেটার লেট দ্যান নেভার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হিন্দুদের বাড়িতে লুটতরাজ চালানো ও নিরীহ হিন্দুদের খুনের অপরাধে ৫০ বছর বাদে ছয় রাজাকারকে ফাঁসির আদেশ দিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (International Crimes Tribunal)। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মোহাম্মদ শাহিনুর ইসলামের (Justice Md Shahinur Islam) নেতৃত্বে তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন খুলনার বটিয়াঘাটার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন হাওলাদার (Amjad Hossain Howlader), সহর আলী সর্দার (Shahar Ali Sardar), মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান শেখ (Atiar Rahman), মোহাম্মদ মোতাসিন বিল্লাহ (Motasim Billah), মোহাম্মদ কামালউদ্দিন গোলদার (Kamal Uddin Goldar)ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (Md Nazrul Islam)। এদিন রায়দানের সময়ে নজরুল ইসলাম বাদে বাকিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হিন্দু অধ্যুষিত খুলনার বটিয়াঘাটায় নারকীয় অত্যাচার চালিয়েছিলেন দোষীসাব্যস্ত ছয় রাজাকার। ১০ অগস্ট বটিয়াঘাটার মাছালিয়া গ্রামে শান্তিলতা মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁর স্বামী বিনোদ মণ্ডলকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে গুলি করে খুন করে। কয়েক মাস বাদে ১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর বটিয়াঘাটার পূর্বহালিয়া গ্রামের চাপরাশী বাড়িতে হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র হরিদাস মজুমদারকে গুলি করে হত্যা করে আসামিরা। ওই ঘটনার ছয়দিন বাদে ১৯৭১ সালের ২১ অক্টোবর হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করতে বটিয়াঘাটার সুখদাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে চার নিঈহ হিন্দুকে খুন করে। দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বরে বটিয়াঘাটার বারো আড়িয়া গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিষ মণ্ডল এবং আব্দুল আজিজকে গুলি করে খুন করে।
২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর মামলার তদন্ত শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৮ অগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। চলতি বছরের ২২ মে শুনানি শেষ হওয়ার পরে রায়দান স্থগিত রেখেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এদিন ট্রাইব্যুনালের রায়ে খুশি সরকার আইনজীবী মোখলেছুর রহমান বাদল। তাঁর কথায়, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে সব কয়টি অভিযোগ সন্দোহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় ছয়জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বিচারপতিরা।’ তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে খুশি নন আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। তিনি জানিয়েছেন, রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন জানানো হবে।