নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: পুলিশ মহলে বরাবরই তোলাবাজ আর ঘুষখোর অফিসার হিসেবে পরিচিত গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। কিন্তু দেশের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ‘পোষ্যপুত্র’ হওয়ার সুবাদে তাঁর বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করতে পারেন না পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা। সেই তোলাবাজ পুলিশ কমিশনারের তোলাবাজির বিরুদ্ধে মুখ খুলে কার্যত সাপের ল্যাজে পা দিয়েছিলেন অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি। তার মূল্যও চোকাতে হয়েছে তাঁকে। শুক্রবার বিদেশ থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যুদ্ধাপরাধীর মতো গ্রেফতার করা হয়েছে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা অভিনেত্রীকে। সূত্রের খবর, মাহির বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়েরের আগে ‘গডফাদার’ তথা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমতিও নিয়েছিলেন কুখ্যাত নজরুল ইসলাম। তাই মাহিকে গ্রেফতারের পরে পোষ্যপুত্র গাজীপুরের পুলিশ কমিশনারের পাশেই দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
মাহি যার বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ তুলেছিলেন সেই গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম ২০০১ সালে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন। জামায়েত ইসলামির ছাত্র সংগঠনের অন্যতম সক্রিয় সদস্য নজরুল কর্মজীবনের শুরুতে বিএনপি-জামায়েত শিবিরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। পরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে ডিগবাজি খেয়ে শাসকদল আওয়ামী লীগের সক্রিয় ক্যাডার হয়ে ওঠেন। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা মহানগর (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ডিসি থাকাকালীন আবিদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে নির্যাতন চালিয়ে এক কোটি টাকা ঘুষ আদায় করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পরেই নড়াইলের আওয়ামী লীগ সাংসদ কবিরুল হক নজরুলের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উচ্চ মহলে নালিশ জানান।তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের নির্দেশে ঘুষখোর নজরুলকে ডিসি পদ থেকে সরিয়ে ওএসডি করা হয়।
২০১৫ সালে আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পরেই কপাল খোলে তোলাবাজ নজরুল ইসলামের। জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার পদে নিয়োগ পান। কিন্তু জয়পুরহাটেও একাধিক ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে কোটি-কোটি টাকা তোলাবাজির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পোষ্যপুত্রের বিরুদ্ধে। উল্টে গত বছর জুলাই মাসে গাজীপুরের পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় কুখ্যাত পুলিশ আধিকারিককে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্লুআইড বয় হওয়ার সুবাদে গাজীপুরে গিয়ে সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারীদের মদত জুগিয়ে কোটি-কোটি টাকা তোলাবাজির অভিযোগ ওঠে নজরুলের বিরুদ্ধে।