নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: কুমিল্লা থেকে বান্দরবানের লামা। নোয়াখালীর চৌমুহনী থেকে রংপুরের পীরগঞ্জ। দেশজুড়ে দুর্গাপুজোর মণ্ডপে হামলার ঘটনায় এবার শাসকদল আওয়ামি লিগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠল। আর তাতেই অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব। হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষোভ প্রশমনে ইতিমধ্যেই রংপুরের পীরগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পুনরায় তৈরি করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হামলার ঘটনায় আওয়ামি লিগ নেতা-কর্মীদের একাংশের জড়িত থাকার যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
চলতি বছরের দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পুজোমণ্ডপে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা শুরু হয়। শুধু তাই রেহাই পায়নি হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকান-প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘরও। হিন্দু সংগঠনগুলির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শতাধিক মণ্ডপ, মন্দিরে হামলা চলেছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কয়েকশো দোকান-বাড়ি। সাম্প্রতিককালে পুজোর সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে এমন হামলা দেখা যায়নি। কুমিল্লায় তৌহিদী জনতার ব্যানারে যারা হামলা করেছিলেন, তাতে স্থানীয় আওয়ামি লিগের নেতা থেকে শুরু করে কাউন্সিলররাও হাজির ছিলেন। বান্দরবানের লামাতেও মণ্ডপে ভাঙচুর চালানোর সময়ে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি দেখতে পেয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্যত্রও হামলাকারীদের পিছনে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ উঠেছে।
শাসকদল আওয়ামি লিগের শীর্ষ নেতারা যতই নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ দাবি করুন না কেন, দলের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের একাংশ যে হিন্দুদের উপরে নির্যাতন ও হামলায় সরাসরি জড়িত, তা প্রকাশ্যে এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনায়। সম্প্রতি ইউনিয়ন নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে এমন দুজনকে প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল যারা হিন্দুদের উপরে আক্রমণের মামলার আসামি ছিলেন।
দেশজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে লাগাতার হামলার পিছনে প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যর্থতাও দেখছেন বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সম্পাদক নির্মল চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘পুজোর আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীর সাথে বৈঠক করেছিলেন পুজো উদ্যোক্তারা। এমনকি ওই বৈঠকে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। অথচ হামলার সময়ে বাধা না দিয়ে বরং হিন্দুদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে নোয়াখালীতে। এমনকি যেসব জায়গায় হামলার আশঙ্কা ছিলো সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আগেই তাদের আশঙ্কার কথা প্রশাসনকে জানিয়েছিল। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এটা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়।