নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য চলতি বছরে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া একুশে পদক পেয়েছিলেন কবি কাজী রোজী। আজ রবিবারই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে ভার্চুয়ালি ওই পদক নেওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তা আর হয়ে উঠল না। শনিবার গভীর রাতে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। প্রবীণ কবির অকালপ্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষা দিবসের প্রাক্কালে দেশের অন্যতম প্রথিতযশা কবির মৃত্যুতে সাহিত্যজগতেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সেগুনবাগিচার বাসভবনে কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নেমেছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কাজী রোজী। শারীরিক অবস্থার আবনতি ঘটায় পরে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসা চলাকালীন আরও বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। মাল্টি অর্গান সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্টও শুরু হয়। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু জীবনে অনেক লড়াইয়ে জয়ী হলেও জীবনযুদ্ধে জিততে পারলেন না তিনি।
১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণ করেন কাজী রোজী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে সাহিত্যে স্নাতক ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করে সরকারি কর্মচারি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। চাকরির পাশাপাশি কবিতা লেখায়ও হাতেখড়ি হয় তাঁর। কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা আকাদেমি সাহিত্য পুরস্কার ও চলতি বছরের বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক পান। তাঁর উল্লেখিত কাব্যগ্রন্থ হলো, ‘পথঘাট মানুষের নাম’, ‘নষ্ট জোয়ার’, ‘আমার পিরানের কোনো মাপ নেই’, ‘লড়াই’। এছাড়া শহিদ মেহেরুন নেসার জীবনী গ্রন্থ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রসিকতার কবিতা নিয়ে গবেষণা গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন। ২০০৭ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে আরও বেশি করে লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময়েও বিশেষ অবদান রেখেছিলেন কবি কাজী রোজী। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ জাতীয় সংসদে মহিলা সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। জাতীয় সংসদের গ্রন্থাগার সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নানা হুমকি উপেক্ষা করে স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেন তিনি।