নিজস্ব প্রতিনিধি: সিঁদুরে মেঘ দেখছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। কেননা বিপুল ভোটদান। একে তো একা লড়তে হচ্ছে, তার ওপর এই বিপুল ভোটদান এখন কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে গেরুয়া শিবিরের নেতাদের। গতকালই সাঙ্গ হয়েছে ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচন(Tripura Assembly Election)। রাত পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে ভোট পড়েছে ৮১ শতাংশেরও বেশি, আর এটাই ভাবাচ্ছে বিজেপি(BJP)কে। এমনিতেই গতকাল সকাল থেকে কোথাও পোলিং এজেন্টদের মারধর, কোথাও ভোটারদের আটকানোর অভিযোগ উঠেছে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। বাম, তৃণমূল ও কংগ্রেসের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাও বাদ যায়নি। সব ক্ষেত্রে আঙুল উঠল শাসকদল বিজেপির দিকে। কিছু কিছু জায়গায় অবশ্য দেখা যায় উলটপুরাণ। আক্রমণ প্রতিহত করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ভোটাররা(Voters)। এই সব বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও অশান্তি সত্ত্বেও বিপুল ভোট পড়েছে উত্তর-পূর্বের এই পাহাড়ি রাজ্যে। বিকেল চারটেয় ভোটগ্রহণ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বিভিন্ন বুথকেন্দ্রে লম্বা লাইন চোখে পড়েছে যা ভাবচ্ছে গেরুয়া শিবিরের নেতাদের। উল্লেখ্য ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৩৬টি আসনে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল গেরুয়া শিবির। জোটসঙ্গী আইপিএফটি পেয়েছিল ৯টি আসন।
আরও পড়ুন বছরে দুইবার করে বাড়বে মাইনে, নির্দেশ রাজ্যের
কেন চিন্তায় বিজেপি নেতৃত্ব? প্রথমত, ডাবল ইঞ্জিন নিয়ে বড়াই করা সত্ত্বেও তার সুফল পাননি সাধারণ মানুষ। তার ওপর চারমুখী লড়াই। ফলে পাশা উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। গতকাল কিন্তু দেখা গিয়েছে, রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় হামলা রুখে মানুষ ভোট দিয়েছেন, যা বিজেপিকে চাপে রেখেছে। বিভিন্ন জায়গায় বুথ জ্যামের অভিযোগও জমা পড়ে নির্বাচন কমিশনে। তারা অবশ্য সেসব উড়িয়ে দিয়েছে। কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়(Rajib Banerjee)। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপির সন্ত্রাসে অশান্তি হয়েছে ত্রিপুরাজুড়ে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে ছিল কার্যত ঠুঁটো। নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করলেও সার্বিক ভোটের হারে স্বস্তিতে রয়েছেন বামফ্রন্ট রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীও। ত্রিপুরার মানুষ এবার তাঁদের সুযোগ দেবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে বিজেপির দাবি, তাঁরা দুই-তৃতীয়াংশ আসন দখল করে ত্রিপুরার ক্ষমতায় আসতে চলেছে। মানুষ নরেন্দ্র মোদি ও মানিক সাহার পাশে থাকছেন।
আরও পড়ুন সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, লুট, অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে বিল আনছেন মমতা
ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পালা শেষ হলেও গণনা এখনও বাকি। আগামী ৭ মার্চ সেই ভোটগণনা হবে ও ফলাফল ঘোষিত হবে। সেদিনই সামনে আসবে যে ত্রিপুরায় বিজেপি দ্বিতীয়বারের জন্য সরকার গড়তে চলেছে কী বামেরা ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে। তবে সেই মুহুর্তের আগে ত্রিপুরার বুকে প্রথম বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব(Biplab Deb) চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। কার্যত তাঁর কথা শুনে অনেকেই মনে করছেন বিজেপি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে আন্দাজ করে তিনি আবারও সক্রিয় হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পদ ফিরে পাওয়ার জন্য। ঠিক কী বলেছেন তিনি? বিপ্লব দেব জানিয়েছেন, ‘আমি যে কাজগুলো শুরু করেছিলাম, মানিক সাহা সেগুলোকেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমি এখনও ত্রিপুরা বিজেপির মুখ, ভবিষ্যতেও থাকব। ত্রিপুরার মানুষ আমাকে ভালবাসে। আমাকে জাতীয় নেতৃত্ব যেভাবে পদ দিয়েছে তা দেশে খুব কম লোককেই দেওয়া হয়েছে। এত কম সময়ে এত পদ পেয়েছি। সভাপতি হওয়ার আড়াই বছরের মধ্যে বিধায়ক, মুখ্যমন্ত্রী, সাংসদ, হরিয়ানার পর্যবেক্ষক। আজ পর্যন্ত ত্রিপুরার কেউ পর্যবেক্ষক হয়নি। সব পদ দল দিয়েছে। আর কত দেবে? এবার আমার দেওয়ার পালা। আমি যে কাজ করেছি তার পরীক্ষা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, বিজেপি ফিরে আসবে। প্রচুর মহিলা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মহিলারা যে মোদিজির ভোটার, এটা উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশে প্রমাণিত। যুবরাও বিজেপির সঙ্গে আছে। তারাও বনধ, ধর্মঘটের বিপক্ষে। মজুররাও বিজেপির সমর্থনে। যে হারে ভোট পড়ছে, তাতে প্রমাণিত ত্রিপুরাবাসী বিজেপিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।’