নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলা থেকে গোয়ার দূরত্বটা অনেকটাই। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে সেই দূরত্বটাই যেন কমে গিয়েছে ভয়ানক ভাবে। গোটা বাংলা কার্যত তাকিয়ে গোয়ার(Goa) দিকে। কেননা বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC) এবার প্রথমবার লড়াই করছে গোয়ার মাটিতে। আরব সাগরের তীরে থাকা একসময়কার পুর্তগীজ উপনিবেশ এখন ভারতের এক অঙ্গ রাজ্য। সেই ইন্দো-ইউরোপীয় সমাজের রাজ্য গোয়ায় মূল লড়াই এবারেও বিজেপি(BJP) আর কংগ্রেসের(INC) মধ্যে। বুথ ফেরত সমীক্ষা বলে দিয়েছিল এবার সেখানে ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হতে চলেছে। কংগ্রেস বা বিজেপি কেউই সেখানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। বস্তুত সেই কারণেই সেখানে এবার কিং মেকার হিসাবে উঠে আসতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন সকাল থেকেই ভোট গণনা শুরু হ্যেছে গোয়ার ৪০টি বিধানসভা কেন্দ্রেই। আর প্রাথমিক ট্রেন্ড কিন্তু বলে দিচ্ছে মিলে যেতে চলেছে বুথ ফেরত সমীক্ষা। কেননা কংগ্রেস বা বিজেপি কেউই সম্ভবত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা সেখানে পাচ্ছে না।
সকাল ১০টা পর্যন্ত গোয়া থেকে যে ছবি উঠে আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি সেখানে এগিয়ে ১৬টি আসনে। কংগ্রেস এগিয়ে ১২টি আসনে। তৃণমূল কংগ্রেস ও মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি(MGP) এগিয়ে ৬টি আসনে। আপ এগিয়ে ১টি আসনে ও অনান্যরা এগিয়ে ৫টি আসনে। আর এই ছবি দেখেই অনেকেই মনে করছেন গোয়ার মাটিতে এবারেও ধাক্কা খেতে চলেছে কংগ্রেস। আর তার অন্যতম কারণ বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাওয়া। কংগ্রেস যদি উদার মনে তৃণমূল, মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি ও অনান্য ছোট দলগুলির সঙ্গে জোট গড়ে ফেলতে পারতো তাহলে আজ হয়তো শেষ হাসি তাঁরাই হাসতো। কিন্তু ট্রেন্ড বলছে কংগ্রেসকে এবারেও সম্ভবত বিরোধী বেঞ্চেই বসতে হবে কংগ্রেসকে। কেননা তৃণমূল ও গোমন্তক পার্টি দুইজনে মিলে কংগ্রেসকে সমর্থন দিলেও সম্ভবত প্রয়োজনীয় বিধায়ক জোগাড় করতে পারবে না সোনিয়া গান্ধি-রাহুল গান্ধির দল। তৃণমূল ও গোমান্তক পার্টির জোট ভাল ফল করলেও কংগ্রেস কম আসন পাওয়ায় তাঁরাও খুব ওজনদার হিসাবে উঠে আসতে পারছে না। সম্ভবত বিজেপি নির্দল ও অনান্য ছোট দলগুলির সমর্থন নিয়েই ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে ফেলতে পারে।
তবে তৃণমূলের আশা গোয়ায় নতুন ভোর তাঁরাই আনবে। প্রয়োজনে কংগ্রেসের সঙ্গেও তাঁরা কথা বলতে পারেন। তবে সবটাই নির্ভর করছে শেষ পর্যন্ত গোয়ার ৪০টি আসনের সম্পূর্ণ ফলাফল সামনে আসার পরেই। গোয়ায় যদি তৃণমূল শেষ পর্যন্ত সত্যিই কিং মেকার হয়ে উঠতে পারে তাহলে সন্দেহ নেই বিজেপি বিরোধী সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের কদর আরও বাড়বে। কেননা মেঘালয়ে ইতিমধ্যেই প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছে তৃণমূল। গোয়ায় সাফল্যের মুখ দেখলে তৃণমূল অনান্য রাজ্যেও বিস্তারের পথে হাঁটতে পারে। তবে গোয়ার ফলাফল কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কংগ্রেসকে এবার নতুন করে ভাবতে হবে তৃণমূলকে নিয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সঙ্গে তাঁরা লড়াই করবে নাকি হাত ধরাধরি করে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে সেটা তাঁদেরকেই ঠিক করতে হবে। তৃণমূলকে যোগ্য মর্যাদা ও জমি দিলে আখেরে লাভ হবে কংগ্রেসেরই। গোয়ার ভোট দেখিয়ে দিল সেখানে কংগ্রেসের আসন কম পাওয়ার মূলে তৃণমূল ও গোমন্তক পার্টির জোট। কংগ্রেস যদি ভোটের আগে এই দুই দলকে যোগ্য মর্যাদা দিত, ঠিকঠাকভাবে এদের আসন ছেড়ে জোট গড়ত তাহলে গোয়ার মাটিতে আজ কংগ্রেসই হাসত। তৃণমূল ভাল ফল করলেও কংগ্রেসের খারাপ ফল গোয়ায় আঁধার কাটাতে পারবে কিনা তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠে গেল।