নিজস্ব প্রতিনিধি: তিস্তায় আসা হড়পা বানের(Teesta Flash Flood Disaster) জেরে ভয়ংকর ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাংলার(Bengal) পড়শি রাজ্য সিকিম(Sikkim)। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাংলার দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা দুটিও। সেই বিপর্যয়ে মৃত্যুর সংখ্যা(Death Toll) ও নিখোঁজের সংখ্যা(Missing Tally) নিয়ে বিতর্ক আগেই বেঁধেছিল। এবার সিকিম সরকারের(Sikkim State Government) বিরুদ্ধে সরাসরি মৃত্যু ও নিখোঁজ সংক্রান্ত তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠল। কেননা সিকিম ও বাংলা মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৫৬জনের দেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। অথচ সোমবার সিকিম সরকার জানিয়েছে মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র ৩৪। বেসরকারি ভাবে ওই ঘটনায় নিখোঁজের সংখ্যা প্রায় ৩০০, অথচ সিকিম সরকার বলছে নিখোঁজের সংখ্যা ১০৫। অভিযোগ, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ভয়ে সিকিমের রাজ্য সরকার মৃত ও নিখোঁজদের সন্ধান চেপে যাচ্ছে। শুধুমাত্র সেই রাজ্যের যে সব বাসিন্দা মারা গিয়েছে ও নিখোঁজ হয়েছেন, কেবলমাত্র তাঁদেরই তালিকা তুলে ধরা হচ্ছে। সেখানে ঠাঁই পাচ্ছে না বাংলা বা ভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা বা পর্যটকেরা।
সিকিম সরকার জানিয়েছিল মৃতদের পরিবারবর্গকে ৪ লক্ষ টাকা করে একলাঈন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সেই সময়েই অবিযোগ উঠেছিল যে, ওই ক্ষতিপূরণ সিকিমের বাসিন্দা নন এমন কেউ পাবেন কিনা তা নিয়ে। কেননা ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে সেই ধরনের কোনও উল্লেখ করা ছিল না। অথচ তিস্তার হড়পা বানে সিকিমের বাইরের বেশ কিছু রাজ্যের পর্যটক এবং বাসিন্দা যারা কর্মসূত্রে সিকিমে থাকছিলেন সেই রকম অসংখ্য মানুষ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বা মারা গিয়েছেন। শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গেই নিখোঁজ ও মৃতের সংখ্যা ৩০। সারা বাংলায় সেই সংখ্যা ৫০’র বেশি। অথচ এই মানুষগুলিকে মৃত বা নিখোঁজদের তালিকায় তুলেই ধরছে না সিকিম সরকার। অন্তত এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। যারা এই অভিযোগ তুলছেন তাঁদের দাবি, শুধুমাত্র ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ভয়েই এই ঘটনা ঘটাচ্ছে সিকিম সরকার।
উল্লেখ্য, এদিন সকাল ১০টার সময়ে সিকিম সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, তিস্তার হড়পা বানের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা মাত্র ৩৪, নিখোঁজ ১০৫ ও আহত মাত্র ২৬। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মোট ৮৫ হাজার ৮৭০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে রাজ্যের অন্তত ১,৭১৬টি বাড়ি। ২,৫৬৩ জন মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হয়েছে মোট ২,৭৬৪ জনকে। এই মুহূর্তে সিকিমে মোট ২৬টি ত্রাণশিবির খোলা রয়েছে। ওই ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ৬,৫০৫ জন মানুষ। রাজ্যের মোট ১৪টি সেতু দুর্যোগের কারণে ভেঙে পড়েছে।
ঘটনাচক্রে এদিন আবহাওয়া পরিষ্কার হতেই জোরকদমে সিকিমের বুকে শুরু হয়েছে উদ্ধারকার্য। পাহাড়ের আকাশে একফোঁটা মেঘ নেই। বরং রোদ উঠেছে। আর পরিষ্কার আবহাওয়ায় জোরকদমে উদ্ধারকাজ শুরু করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। এত দিন আবহাওয়ার কারণেই উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছিল। এদিন সবার আগে উত্তর সিকিমের লাচেন উপত্যকায় আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার করার কাজ শুরু হয়েছে। পূর্ব সিকিম থেকে লাচেনের দিকে সকাল থেকেই একের পর এক হেলিকপ্টার পাঠায় বায়ুসেনা। তার মাধ্যমেই পর্যটকদের উদ্ধার করে নামিয়ে আনা হচ্ছে। প্রায় ৪ হাজার পর্যটক ওই এলাকায় আটকে রয়েছেন।