নিজস্ব প্রতিনিধি: পুজো মিটলেই শীতের আবির্ভাব হবে। আর শীতকাল মানেই ছুটির আমেজ আর ঘুরুঘুরু। শীতকালে কোথাও বেড়াতে যেতে চাইলে এই বেলা প্ল্যান করে নেওয়াই ভালো। না হলে টিকিট, হোটেল প্রায় সবই হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। এই সময় অনেক বিমান সংস্থা প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড়ে টিকিট দিচ্ছে। আবার ট্রেনের টিকিটও পাওয়া যাচ্ছে। তাই চটজলদি কোথায় ঘুরতে যাবেন সেটা ঠিক করে ফেলুন। সবচেয়ে ভালে হয় ১০-১২ জনের একটি দল তৈরি করে কোথাও যান, তাহলে পরিবহণ ও খাওয়া খরচে কিছুটা রাশ টানা যায়। আজ আমরা আপনাদের কয়েকটি শীতের জায়গার তথ্য তুলে ধরছি। যেখানে শীতকালে ঘুরতে যাওয়ার মজাই আলাদা।
আউলি, উত্তরাখণ্ড
গোটা শীতেই আউলি মোটা বরফের চাদরে মোড়া থাকে। ভারতে একমাত্র শীতকালীন স্পোর্টসের আদর্শ জায়গা আউলি। দেশ বিদেশের পর্যটকরা শীত পড়তেই এখানে ভিড় জমান বরফে স্কি করার জন্য। যেদিকেই তাকাবেন সাদা বরফ। মিনি সুইজারল্যান্ডও বলে থাকেন আউলিকে। পাহাড়ের গায়ে পাইন-ওক গাছের ঘন জঙ্গল। অনেকটা শঙ্কু আকৃতির। উপরের দিকে সরু এবং নীচের দিকে মোটা। শীতের ঝকঝকে আকাশে এই আউলি থেকে মানা পর্বত, মাউন্ট নন্দাদেবী এবং নর পর্বতের দুর্দান্ত ঝলক দেখতে পাওয়া যায়। পাশাপাশি আউলিতে একটি মিষ্টি জলের হৃদও আছে, যার নাম ছত্রকুণ্ড। অনেকেই এখান থেকে কুমারী পাস পর্যন্ত ট্রেকিংয়ে যান।
মানালি, হিমাচল প্রদেশ
ভারতের অন্যতম সেরা শৈলশহর মানালি। শান্ত নিরিবিলি ছোট্ট একটি শহর। এখানকার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে গাছপালা, বাড়িঘর সবই সুন্দর। শীতে এখানে কিছু সময় বরফ পাওয়া যায়, তবে সেটা খুব বেশী নয়। তবে ঠান্ডার প্রকোপ অনেক বেশি। তাই শীতের মজা উপভোগ করতে বেশিরভাগ মানুষ ছুটে আসেন মানালিতে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে অথবা প্রিয়জনের সঙ্গে একান্তে চুটিয়ে উপভোগ করার সেরা জায়গা মানালি। হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলা থেকে এর দূরত্ব বেশি নয়। তাই বেশিরভাগ পর্যটকই শিমলা ও মানালি দুটোই ঘুরে যান। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য ও জঙ্গলের পরিবেশ সত্যিই অসাধারণ।
তাওয়াং, অরুনাচল প্রদেশ
তাওয়াং ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের উপেক্ষিত শৈল শহর বলাই যায়। কিন্তু যদি একবার শীতকালে তাওয়াংয়ে ঘুরতে আসেন, তবে বুঝবেন এর মাহাত্ম। মনে হবে যেন তিব্বতে বেড়াতে এসেছেন। ছবির মতো সুন্দর জায়গা তাওয়াং। এটি অরুনাচল প্রদেশের প্রশাসনিক সদর। তবে শীতে তাওয়াং রূপের ডালি উজার করে দেয়। এখান থেকে চিন সীমান্ত খুব বেশী দূরে নয়। প্রচুর বরফ পড়ে এদিকটায়। ফলে রাস্তাঘাট বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ হয়ে যায়। যদিও সেনাবাহিনীর তৎপরতায় বর্তমানে এই এলাকায় রাস্তাঘাট অনেকটাই ভালে হয়েছে। ফলে তাওয়াং যাওয়ার কষ্টও এখন অনেকটা লাঘব হয়েছে। তাওয়াংয়ের প্রকৃতিক সৌন্দর্য তো আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এছাড়াও আপনারা তাওয়াং মনাস্ট্রি, জশবন্ত গড়, জং জলপ্রপাত, সঙ্গেতসর হ্রদ, তাওয়াং ওয়ার মেমরিয়াল ঘুরে নিতে পারেন।
দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ
পাহাড়ের রানী পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শৈল শহর দার্জিলিং সম্পর্কে নতুন করে কিছুই বলার নেই। টাইগার হিল থেকে সূর্যদয়ের সময় কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দেখার আশায় বহুবার ছুটে যাওয়া যায় দার্জিলিং। শীতকালে কম খরচে বেড়াতে যাওয়ার আদর্শ জায়গা দার্জিলিং। তবে আমরা কিন্তু শুধু দার্জিলিং শহর নিয়েই বলছি না। গোটা জেলাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ট্য়ুরিস্ট স্পট। বর্তমানে ভিলেজ ট্যুরিজমে জোর দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ফলে দার্জিলিং জেলার একাধিক ছোট গ্রামে হোম স্টে গড়ে উঠেছে। সৌন্দর্যের দিক থেকে কেউই কোনও অংশে কম নয়। তাই একটু খোঁজ খবর নিয়ে শীতে বেড়িয়ে পড়ুন দার্জিলিংয়ের উদ্দেশ্যে।
গুলমার্গ-সোনামার্গ, জম্মু ও কাশ্মীর
কাশ্মীর নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ভূস্বর্গ বলতে যা বোঝায় সেটাই হল কাশ্মীর। স্থানীয়রা বলেন জন্নত। কাশ্মীর উপত্যকায় গুলমার্গ শীতে আরও মোহময়ী হয়ে ওঠে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি গুলমার্গ ঘোরার সেরা সময়। ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে এখানকার তাপমাত্রা ৪-৫ ডিগ্রিতে নেমে যায়। জানুয়ারি মাসে গুলমার্গে হয় স্নো ফেস্টিভ্যাল বা বরফ উৎসব। দেশ বিদেশের পর্যটকরা ভিড় করেন স্কি করার উদ্দেশ্যে। আপনিও চাইলে স্থানীয় গাইডের সাহায্য়ে বরফে স্কি করে নিতে পারবেন। সবমিলিয়ে শীতকালে গুলমার্গে সময় কাটানো আপনার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা হতে পারে। অপরদিকে সোনমার্গ হল কাশ্মীরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। সোনমার্গের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কারোরই চোখ কখনও ক্লান্ত হবে না। লিডার নদীর গর্জন তখন কমে গিয়ে ঝিরঝিরি শব্দে পরিনত হবে। পরিষ্কার আকাশের ব্যাকড্রপে সবুজ প্রকৃতিতে বরফের সাদা সাদা ছোপ। অপূর্ব সুন্দর হ্রদ, ফুল, গাছপালা, পাখি আপনাকে খুব কাছে টেনে নেবে। সোনামার্গের হৃদটি আবার অত্যাধিক ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে যায়। সেটাও একটা অভিজ্ঞতা।
মুন্নার, কেরল
দক্ষিণ ভারতে একটা কথা খুব প্রচলিত, কেরল নাকি ঈশ্বরের দেশ। তিনিই নিজের মতে করে কেরলকে সাজিয়েছেন। কেরলের কোনায় কোনায় প্রকৃতি নিজেকে উজার করে দিয়েছে একথা বলাই বাহুল্য। আর কেরলের নাম উঠলেই সবার আগে আসে মুন্নারের নাম। পশ্চিমঘাট পর্বতের কোলে ছোট্টো পাহাড়িয়া গ্রাম হল মুন্নার। কেরলের যাবতীয় সৌন্দর্যের নির্যাস পাবেন এখানেই। পাহাড়ের গায়ে থরে থরে সাজানো চা বাগান, আর তার সারা শরীরে আলতো স্পর্শে লেগে থাকা মেঘের রাশি। মুন্নারের আকাশে বাতাসে রোম্যান্স আর রোমাঞ্চো ভরপুর। ট্রেকিং কিনবা রক ক্লাইম্বিং যেমন করতে পারবেন, তেমনই নৌকা বিহার এবং চা-বাগানে ডুয়েট গাওয়ার দারুণ সুযোগ পাবেন। শীতকালে এখানকার আবহাওয়া সবচেয়ে সুন্দর। খুব একটা ঠান্ডা না পড়লেও শীতের আমেজ থাকে চমৎকার। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল মুন্নার হল পকেট ফ্রেন্ডলি জায়গা। তাই এই শীতে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করলে ভেবে দেখতেই পারেন মুন্নারের কথা।