নিজস্ব প্রতিনিধি: হাতে আর মাত্র ৫ দিন। তারপর আগামী রবিবারেই কলকাতায়(Kolkata) ব্রিগেডের ময়দানে(Brigade Parade Ground) লক্ষ কন্ঠে উচ্চারিত হবে গীতার শ্লোক। এক লক্ষের বেশি মানুষের উপস্থিতি, হাজার হাজার শঙ্খের ধ্বনিতে কার্যত বিশ্ব রেকর্ড তৈরি হতে চলেছে ব্রিগেডে, এমনই দাবি তুলেছে গেরুয়া শিবির। সেও সভায় উপস্থিত থাকবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী(Narendra Modi)। উপস্থিত থাকবেন একাধিক বিশেষ ব্যক্তিত্ব, বহু সাধু-সন্ত, বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা এবং স্পনসর ও ভিআইপিরা। তাছাড়া তো সাধারন মানুষের সমাবেশ তো থাকছেই। সবাইকে নিয়ে যাওয়ার জন্য থাকবে ২৫০টি বাস ও লরি। ১৩টি বিশেষ ট্রেন চালানোর জন্যও রেল দফতরের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে খরচ ধরা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। কিন্তু তার মাঝেই প্রশ্ন ঘুরছে বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) অন্দরে। আদৌ লক্ষ কন্ঠ আসবে তো ব্রিগেডে? নাকি এই সভাও ধর্মতলায় হয়ে যাওয়া শাহি সভার মতোও ফ্লপ শোতে রূপান্তরিত হবে! প্রশ্ন ভাবাচ্ছে ‘লক্ষ কন্ঠে গীতাপাঠ’ অনুষ্ঠানের আয়োজক অখিল ভারতীয় সংস্কৃত পরিষদ, সংস্কৃতি সংসদ ও মতিলাল ভারত তীর্থ সেবা মিশন আশ্রমের মতো একাধিক সংগঠনকেও।
‘লক্ষ কন্ঠে গীতাপাঠ’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই চাঙ্গা হওয়ার পথ খুঁজছে বাংলার গেরুয়া শিবির। একইসঙ্গে এটাও জানা যাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির পরেই রাজ্যে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah) ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা(J P Nadda)। তবে ইঙ্গিতপূর্ণ বিষয় হল, এবার কলকাতায় গিয়ে সম্ভবত কোনও প্রকাশ্য সমাবেশ করবেন না শাহ। বরং তিনি ‘ভোকাল টনিক’ দেবেন। পাশাপাশি খতিয়ে দেখবেন বঙ্গ বিজেপির লোকসভা নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতিও। এক্ষেত্রে দলের সমস্ত রাজ্য নেতার সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠকের পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর। এমনকী, বিজেপির তথাকথিত ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠীর কোনও ক্ষোভ-অসন্তোষ থাকলে তাঁদের নিয়েও আলাদা ‘সেশন’ করার ভাবনা রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। এমনটাই খবর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে। অর্থাৎ, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি পর্বে দলের অভ্যন্তরীণ কলহ সম্পূর্ণ মিটিয়ে নিতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু মাঝে তাঁদের ভাবাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সভায় ভিড়ের সমাগম নিয়ে।
লোকসভা ভোটের আগে কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের পাল্টা সমাবেশ আয়োজন করেছিল বিজেপি। তার জন্য ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৃণমূলের শহিদ দিবসের সভাস্থলকেই বেছে নেওয়া হয়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ বঙ্গ বিজেপিকে এক সূত্রে গাঁথতে ২৯ নভেম্বরের সেখানেই হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সভার প্রচার সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে খামতি ছিল না। তারপরও গেরুয়া শিবির যে তাদের কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক ‘ডিভিডেন্ড’ তুলতে পারেনি—আড়ালে তা স্বীকার করছে নেতৃত্বের একাংশ। অনেকে মনে করছেন, সেদিন শাহের শরীরি ভাষা থেকে শুরু করে গোটা ভাষণে কখনও সেই পরিচিত ‘জোশ’ টের পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে শাহের ওই ‘ফ্লপ’ সভাকেই ‘মেগা হিট’ বলে প্রচারের কৌশল নিয়েছিল বঙ্গ বিজেপি। সূত্রের দাবি, শাহের ওই সভায় সেদিন আড়াই লক্ষ লোক হয়েছে বলে প্রচার চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পদ্ম শিবিরের নেতাদের। অথচ, কেন্দ্রীয় সরকারের গোয়েন্দা শাখার তথ্য বলছে, ওই দিন ধর্মতলার সভাস্থলে মেরেকেটে ৬২ হাজার লোক জড়ো হয়েছিল। যদিও টার্গেট ছিল ২ লক্ষ লোক জমায়ের করার। আর এখানেই ভাবাচ্ছে সবাইকে ব্রিগেডের ভিড় নিয়ে।
ঘটনা হচ্ছে, ‘লক্ষ কন্ঠে গীতাপাঠ’ অনুষ্ঠান নিয়ে প্রচারের কোনও খামতি রাখা হচ্ছে না। কিন্তু এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাজ্যের কোথাও কোনও উন্মাদনাও দেখা যাচ্ছে না। এর একতা বড় কারণ শীতের মরশুমে ছুটির দিনে বিশেষ করে বড়দিনের সময়ে মানুষ ঘুরতেফিরতে পছন্দ করেন। পিকনিকে যেতে চান। সেই সব ফেলে দিয়ে কয়জন আসবেন গীতাপাঠ করতে? তারওপর আবার সেদিন রয়েছে TET। ফলে সেই পরীক্ষা নিয়েও ব্যস্ত থাকবে তরুণ প্রজন্ম ও তাঁদের অভিভাবকরা। ফলে অনেকেরই আসার ইচ্ছা থাকলেও তাঁরা আসতে পারবেন না। তাই ব্রিগেডে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আদৌ লক্ষ মানুষের সমাগম হবে কিনা তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই। শাহি সভা ফ্লপ হওয়ার ছবি বলে দিচ্ছে, বাংলার মানুষ মুখ ঘোরাতে শুরু করে দিয়েছে বিজেপির দিক থেকে। এখন যদি প্রধানমন্ত্রীর সভাও ফ্লপ হয় তাহলে ২৪’র যুদ্ধের আগে আদৌ কী রসদ পাবে বঙ্গ বিজেপি! উঠছে প্রশ্ন।