নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরের(Bay of Bengal) জল ক্রমশ তেতে উঠছে। তাই শীতের মরশুমেও সেখানে পর পর ঘূর্ণিঝড়(Cyclone) তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মন্দৌস তাণ্ডব চালিয়েছে দক্ষিণ ভারতে। তামিলনাড়ু, পুদুচেরির উপকূল ঘেঁষা এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তুমুল ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি এখন শক্তি হারিয়ে পরিণত হয়েছে নিম্নচাপে। সুস্পষ্ট নিম্নচাপ হিসাবে তা অবস্থান করছে তামিলনাড়ুর ওপরে। আগামী কয়েক ঘণ্টায় ধীরে ধীরে তার শক্তি আরও কমে যাবে। কিন্তু গল্প এখানেই শেষ হচ্ছে না। এই ঘূর্ণিঝড়ের পিছু পিছু আরও একটি ঘূর্ণিঝড় জন্ম নিতে চলেছে বঙ্গোপসাগরের বুকে। মনে করা হচ্ছে সেই ঘূর্ণিঝড় মন্দৌসের থেকে শক্তিশালী হবে এবং তা বাংলার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসতে পারে। মন্দৌসের প্রভাব বাংলায় ছিঁটেফোঁটা কিছু পড়েনি। খালি বাতাসে তাপ কিছুটা বেড়েছে, তার জেরে কমেছে ঠাণ্ডার আমেজ। কিন্তু নতুন ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে এলে তার হাত ধরে ভালই ঝড়-বৃষ্টি পোয়াতে হবে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দাদের।
আরও পড়ুন পুলিশে কাজ না হলে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামবে, নজরে আবাস যোজনা
দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, দক্ষিণ আন্দামান সাগরে(South Andaman Sea) অপর একটি ঘূর্ণাবর্তের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যা থেকে আগামী ১৩ ডিসেম্বর একটি নতুন ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে পারে। সেটি ক্রমশ উত্তর দিকে এগিয়ে এসে বঙ্গোপাসাগরে পা রেখে নিম্নচাপে পরিণত হবে। এরপর সে ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে ধাপে ধাপে ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিতে পারে বলেই জানা গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে এরপরেই সে এগিয়ে আসবে উত্তরের দিকে। সেক্ষেত্রে বাংলা(Bengal)-ওড়িশা(Odisha) হবে তার অভিমুখ। তাই এখন থেকেই এই বিষয়ে কড়া নজারদারি রাখতে শুরু করেছে মৌসম ভবনের পাশাপাশি ভুবনেশ্বরের আবহাওয়া দফতর। মন্দৌস শুক্রবার রাতে যখন স্থলভূমিতে প্রবেশ করে তখন তার গতিবেগ ছিল ঘন্টায় মাত্র ৭৫কিমি। এর কারণ হিসাবে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মন্দৌস ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ার পরে বেশি সময় পায়নি তার শক্তি বাড়ানোর জন্য। কেননা কাছেই ছিল স্থলভূমি। কিন্তু নতুন যে ঘূর্ণিঝড় জন্ম নেবে সেটি পর্যাপ্ত সময় পাবে ধাপে ধাপে তার শক্তি বাড়ানোর জন্য। তাই সে যখন স্থলভূমিতে পা রাখবে তখন তার গতিবেগ ও শক্তি অনেকটাই বেশি হবে।
আরও পড়ুন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে মেলে না শুভেন্দুর দাবি, নজরে পুলিশ
আবহাওয়াবিদদের দাবি, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে ১৮ ডিসেম্বর নাগাদ নয়া ঘূর্ণিঝড় বাংলা-ওড়িশা উপকূলে পা রাখবে। যদিও আবহাওয়াবিদদের একাংশের দাবি, ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেও তা বাংলা-ওড়িশার অভিমুখে নাও আসতে পারে। কেননা যে কোনও ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের এলাকা সব থেকে বেশি উত্তপ্ত থাকে। সে আশেপাশের জলীয় বাষ্প শুষে নিজের শক্তি বাড়ায়। কিন্তু পথে সে ঠাণ্ডা হাওয়া পেলে সেটাও শুষে নেয়। কিন্তু সেই ঠাণ্ডার হাওয়ার জেরে তার শক্তিও কমতে থাকে। তাই বঙ্গোপসাগরের বুকে জন্ম নিতে চলা নতুন ঘূর্ণিঝড় হয় অনেক কম শক্তি নিয়ে অতি গভীর নিম্নচাপ হয়ে স্থলভূমিতে পা রাখবে নাহলে সেই উত্তর অন্ধ্র – দক্ষিণ ওড়িশা উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকবে। যদি এর কোনওটাই না হয় তাহলে কিন্তু বাংলার উপকূলই হতে চলেছে তার সম্ভাব্য ল্যান্ডফলের জায়গা। সেক্ষেত্রে দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা। ঝাড়গ্রাম, কলকাতা, হাওড়া ও হুগলি জেলায় ডিসেম্বর মাসে প্রবল ঝড়বৃষ্টির মুখে পড়তে হবে। আর এই কারণেই কিন্তু দক্ষিণ আন্দামান সাগরে জন্ম নিতে চলা ঘূর্ণাবর্তের দিকে কড়া নজর রাখছে মৌসম ভবন।