নিজস্ব প্রতিনিধি: ছেলেমেয়েকে নিয়ে সব বাবা-মারই অনেক স্বপ্ন থাকে। সন্তান উচ্চশিক্ষিত হবে, সুপ্রতিষ্ঠিত হবে, সকলের কাছে আদরণীয় হবে, সম্মাণিত হবে – এমন স্বপ্নটাই বাবা-মা দেখে থাকেন। সম্মককে নিয়েও এই স্বপ্নই দেখেছিলেন রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর মহকুমার পানিহাটি(Panihati) পুরসভার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রোডের বাসিন্দা সনৎ কুমার চৌধুরী ও কাকলি চৌধুরী। সম্মক তাঁদের একমাত্র সন্তান। বয়স মাত্র ২৮। এই সম্মককে ঘিরেই এখন ঘোর দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চৌধুরী দম্পতি। কেননা সম্মক এখন রয়েছে ইউরোপের জর্জিয়াতে(Georgia)। সেখানে সে গিয়েছিল ডাক্তারি পড়ার পাশাপাশি পিএইচডি করতে। কিন্তু কোভিড আর লকডাউন সব হিসাব গুলিয়ে দিয়েছে। বিদেশের মাটিতেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় সম্মক(Sammak Chowdhury) বাধ্য হয় বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ নিতে। কিন্তু সেই ঋণ আর সে শোধ তো করতেই পারছে না, এমনকি বাড়ি ভাড়া না মেটানোয় তাঁকে রাস্তায় রাস্তায় দিন কাটাতে হচ্ছে। এমনকি দেশে ফিরে আসার টাকাও নেই তার কাছে। আবার চোধুরী দম্পতির কাছে ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার মতোও আর্থিক সামর্থ্য নেই। কোনও উপায় না দেখে তাঁরা এবার দ্বারস্থ(Help) হয়েছেন রাজ্য প্রশাসন তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee)।
জানা গিয়েছে, সনৎবাবু কাঁচরাপাড়া রেল ওয়ার্কশপের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। সম্মক জর্জিয়া যায় ২০১৬ সালে। সেখানকার এলএলসি টিচার ইউনিভার্সিটিতে সে জিও মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিল। ৫ বছরের কোর্স শেষে আরও ১ বছর তার সেখানে ইন্টার্ন করার কথা। তারপরেই দেশে ফিরতে পারত সম্মক। কিন্তু তার আগেই তার জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। কোভিডের কারণে এবং সে নিজে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে চিকিৎসার জন্য বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার করতে হয়। যদিও তার পড়া ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। হয়ে গিয়েছে পরীক্ষাও। বাকি আছে অবশ্য ইন্টার্নশিপ। ঋনের বোঝায় জর্জরিত সম্মক বাড়িভাড়াটুকুও দিতে পারেনি। তাই তার জিনিসপত্র সব আটকে রেখেই বাড়িওয়ালা তাকে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছে। তাই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেই এখন জীবন কাটছে সম্মকের। এই অবস্থায় চৌধুরী দম্পত্তির কাছেও এমন টাকাপয়সা নেই যে ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনবেন। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা এবার রাজ্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে যদি রাজ্য সরকার সম্মককে বাংলায় ফিরিয়ে আনার কোনও ব্যবস্থা করতে পারে।
জানা গিয়েছে, সম্মকের ভিসা চলতি মাসেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই মাসের মধ্যে সে দেশে ফিরতে না পারলে জর্জিয়ার প্রশাসন তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে পারে বা জেলেও পাঠাতে পারে। সম্মকের কাছে এখন কানাকড়ি পয়সাও নেই। এই অবস্থায় চৌধুরী দম্পতি ব্যারাকপুরের মহকুমা শাসক ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের সঙ্গে দেখা করে সব সমস্যার কথা খোলাখুলি জানিয়েছেন। তারপরেই রাজ্য প্রশাসনের তরকে বিষয়টি জানানো হয় কেন্দ্রের বিদেশমন্ত্রকে। এমনকি এই বিষয়ের প্রয়োজনীয় সব নথিও পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যদিও এখনও পর্যন্ত সম্মক দেশে ফেরেনি। এই অবস্থায় চৌধুরী দম্পতি চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় যেভাবে ইউক্রেনে আটকে যাওয়া পড়ুয়াদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে তাঁদের পড়াশোনার শেষ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সেইভাবে যেন সম্মককে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এটাই এখন তাঁদের একমাত্র আর্জি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।