নিজস্ব প্রতিনিধি: সারা রাজ্যে নয়, শুধুমাত্র একটি জেলার কিছু নির্দিষ্ট এলাকায়। কিন্তু সেটাই রাজ্য প্রশাসনের পাশাপাশি আমজনতার কাছেও মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে। কেননা নির্দিষ্ট ওই অঞ্চলে পর পর দুই দিনের অবরোধ, হিংসাত্মক ঘটনা কলকাতায় ঢোকার পথে বা কলকাতা থেকে বার হওয়ার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। হাওড়া(Howrah) শহর ও উলুবেড়িয়া শহরের আশেপাশে থাকা সাঁতরাগাছি(Santragachi), সলপ(Salap), ডোমজুড়, অঙ্কুরহাটি, ফুলেশ্বর, চেঙ্গাইল(Chengail), বাউড়িয়া, ধূলাগড় – ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের কার্যত পাশে থাকা এলাকাগুলিতেই বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে অবরোধ, সঙ্গে হিংসাত্মক আন্দোলন। পয়গম্বর বিতর্কে শুরু হওয়া এই ঘটনার জেরে শুক্রবার রাত থেকেই হাওড়া জেলায় ইন্টারনেট(Internet) পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সমস্যার সমাধান কতখানি হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
শনিবার সকাল থেকেই হাওড়া জেলার কোনও অঞ্চলেই মিলছে না ইন্টারনেট পরিষেবা। প্রশাসনিক স্তরে জানানো হয়েছে এসএমএস ও ফোন পরিষবা চালু থাকছে। যদিও অনেক এলাকার মানুষেরই অভিযোগ সেই পরিষেবাও ঠিকঠাক মিলছে না। ধাক্কা খেয়েছে এটিএম ও অনলাইন পরিষেবাও। এদিন সকাল থেকেই কার্যত হাওড়া শহরের বেশ কিছু এলাকা রীতিমত থমথম করছে। তবে এই ঘটনার জন্য বড় ধাক্কা নেমে এসেছে পরিবহণ ক্ষেত্রে। বেশ কিছু বাস রুট এদিন সকাল থেকেই বন্ধ রেখেছেন বাস মালিকেরা। ঝামেলার জন্য দীর্ঘক্ষণ বাস আটকে থাকার পাশাপাশি বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনার সম্ভাবনা থাকায় রাস্তায় বাস নামাচ্ছেন না বেশ কিছু রুটের বাস মালিকেরা। তাঁরা সাফ জানিয়েছেন ঝামেলা না মেটা পর্যন্ত বাস রাস্তায় নামাবেন না তাঁরা। পাশাপাশি এদিনও হাওড়া থেকে বেশ কিছু ট্রেন বাতিল রাখা হচ্ছে। খুব একটা স্বাভাবিক হয়নি লোকাল ট্রেন পরিষেবাও। ফলে নিত্যদিনের কর্মস্থলে যাওয়া মানুষের দুর্ভোগ তাই চট করে কাটার কোনও লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না।
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শনিবার সকাল থেকেই ডোমজুড়, সাঁকরাইল, পাঁচলা, উলুবেড়িয়া, মনসাতলা, চেঙ্গাইল, নিমদীঘি, গঙ্গারামপুর, বাজারপাড়া, ফুলেশ্বর, রাজাপুর, কুর্চি শিবপুর, খালাতপুর, গড় ভবানীপুর, উদয়নারায়ণপুর, বাগনান, ডোমজুড়, সলপ, অঙ্কুরহাটি, সাঁতরাগাছি এলাকার বেশ কিছু জায়গা সহ আরও কিছু অঞ্চলে ১৪৪ ধারা লাগু হয়েছে। সবকটি এলাকায় পুলিশি টহলদারি চলছে। কারও বিরুদ্ধে অশান্তি ছড়ানোর বা প্ররোচনা দেওয়ার প্রমাণ মিললে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার অনুরোধ করা হয়েছে। তবে এই অবরোধ, বিক্ষোভের ঘটনা ঠেকাতে এবার বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহম্মদ ইয়াহিয়া জানিয়েছেন, ‘প্রশাসন ভালো কাজ করেছে। লাঠি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করেছে। যারা প্রশাসনের ওপর হামলা করছে, বোমা ছুঁড়ছে তাদের ধিক্কার। বাংলার কোথাও যাতে এই অশান্তি না ছড়ায়। প্রশাসন কড়া হাতে মোকাবিলা করুক। বিক্ষিপ্তভাবে যে ঘটনা হয়েছে তা কাম্য নয়। সকলকে শান্তিরক্ষার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে ইমামদের তরফে। কোথাও যাতে অবরোধ করে, গাড়ি জ্বালিয়ে, দোকান জ্বালিয়ে অশান্তি পাকানো না হয় সেটা সবাইকে দেখতে হবে।