নিজস্ব প্রতিনিধি, লন্ডন : কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে’র একটি গানের কথা ছিল, ‘ললাট লিখন লেখেন বিধাতা, নাম কিনেছেন ভাগ্যদাতা।’ ললাট লিখনেই আজ ফ্রাইড চিকেন বেচে দিন গুজরান করছেন লিভারপুলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার জেরোম সিনক্লেয়ার। ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলা ২৬ বছর বয়সী ফুটবলারের অবশ্য তার জন্য কোনও লজ্জা নেই। বরং বার্মিংহামে রাস্তার পাশে ফ্রাইড চিকেনের দোকান খুলে অনেকটাই গর্বিত।
অথচ এমনটা হওয়ার কথাই ছিল না। শৈশবে ফুটবলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন সিনক্লেয়ার। তাঁর পছন্দের ক্লাব ছিল আর্সেনাল। আর আদর্শ ছিলেন ফরাসি ফুটবলার থিয়েরি অঁরি। আট বছর বয়সে বার্মিংহামের ওয়েস্ট ব্রমউইচ ক্লাবে হাতেখড়ি তাঁর। যখন বয়স মাত্র ১৪ তখন ওয়েস্ট ব্রমউইচ আলবিওনের যুব দল থেকে ১৪ বছর বয়সে সিনক্লেয়ারকে দলে নিয়েছিল লিভারপুল। ইংল্যান্ডের তারকা স্ট্রাইকার রাহিম স্টার্লিংও তখন লিভারপুলের একাডেমিতে। লিভারপুলের তৎকালীন ম্যানেজার কাম কোচ তাঁর মধ্যে স্ফুলিঙ্গ দেখেছিলেন। ২০১২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ১৬ বছর ৬ দিন বয়সে লিভারপুলের জার্সি গায়ে প্রথম মাঠে নেমে ইতিহাস গড়েছিলেন। যে ক্লাবে হাতেখড়ি সেই ওয়েস্ট ব্রমউইচের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার পর সিনক্লেয়ারকে সতীর্থরা পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন। লিগ কাপে সেই ম্যাচ খেলে ফেরার পর সিনক্লেয়ার বলেছিলেন, ‘স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’
যদিও তার পরের ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। মাত্র পাঁচ ম্যাচ খেলার পরে ২০১৬ সালে লিভারপুল ছেড়ে দিয়েছিল তাঁকে। অলরেডদের ছেড়ে ওয়াটফোর্ডে যোগ দেন সিনক্লেয়ার। ২০২১ সালে ওয়াটফোর্ডের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকেই ক্লাবহীন হয়ে পড়েন সিনক্লেয়ার। গত বছর অক্সফোর্ড ইউনাইটেডে ট্রায়াল দিয়েছিলেন। কিন্তু স্থায়ী চুক্তি করতে রাজি হয়নি অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ। ফলে জন্মভিটে বার্মিংহামে ফিরে ডাডলি সড়কে মরলি’র ফ্রাইড চিকেনের একটি শাখা খুলে সংসার নির্বাহ করছেন। টুইটারে প্রাক্তন লিভারপুল ফুটবলের অনুসারীসংখ্যা ৭২ হাজার। ইনস্টাগ্রামে প্রায় ৬৬ হাজার। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব একটা সক্রিয় নন সিনক্লেয়ার। ফুটবল থেকে অনেক দূরে সরে এসেছেন। আর কখনও তাঁকে বল পায়ে মাঠ দাপাতে দেখা যাবে কিনা, সেই উত্তরও কালের গর্ভে।