24ºc, Haze
Thursday, 23rd March, 2023 4:23 am
নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গান বেঁধে সমাজজীবন, রাজনীতির জগত ও সোশ্যাল মিডিয়ায়(Social Media) রীতিমত হইচই ফেলে দিয়েছেন বাংলার এক লোকশিল্পী(Bengal Folk Artist)। তবে সেই গান মোদি বন্দনার নয়। বরঞ্চ সেই গানে ছত্রে ছত্রে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে(Narendra Modi) আক্রমণ করা হয়েছে। দোতারা বাজিয়ে সেই শিল্পী গাইছেন, ‘ওরে ভাই রে ভাই, নরেন্দ্র মোদির মতো নিষ্ঠুর কেউ নাই’, সেই ভিডিও এখন ভাইরাল হয়েছে নানান সোশ্যাল মিডিয়াতে। আর এই ঘটনায় রীতিমত ক্ষুব্ধ বঙ্গ বিজেপি(Bengal BJP)। তাঁরা ওই লোকশিল্পীর বিরুদ্ধে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অপমান ও মানহানি করার অভিযোগে আদালতে মামলা ঠোকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সেই মামলা কোনও মহকুমা আদালত না জেলা আদালতে করা হবে নাকি হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে করা হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন বলেই বঙ্গ বিজেপিন সূত্রে জানা গিয়েছে।
যাকে ঘিরে এই ঘটনা সেই লোকশিল্পীর নাম তিতুমীর(Titumir)। সবাই তাঁকে এই নামেই চেনেন। যদিও তাঁর আসল নাম মীর আল্লামা কবির। বাড়ি উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পিকনিধারা গ্রামে। দিনহাটা-২ ব্লকের গোবরাছড়া নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে এই গ্রামটি। তিতুমীরের হাত ধরে এখন এই গ্রাম দেশের নজর কেড়ে নিয়েছে। কী আছে তিতুমীরের গানে? সেই গানে আছে আগুন। মোদির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার আগুন। গানের অংশে রয়েছে, ‘১০০ দিনের করিলাম কাজ, ১ বছর হইল কাজের টাকা না দিলু আজ, গরিব মানুষের বাঁচার উপায় নাই। আইবিএফের না পাই টাকা, ব্যাঙ্ক যাইয়া দেখি অ্যাকাউন্ট ফাঁকা। বাংলার মানুষ বাঁধো জোট, সামনে আইছে পঞ্চায়েত ভোট, টাকা মারা বিজেপির পাশে নাই লোক। বিজেপি নেতার কান ধরিয়া, কাজের টাকা নিবেন আদায় করিয়া, আমরা একশো দিনের কাজের টাকা চাই।’ একশো দিনের কাজের টাকার দাবিতে তিতুমীরের এই গান এখন বাংলার ঘরে ঘরে ভালোই সাড়া ফেলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তৃণমূল এই গানকে হাতিয়ার করে উত্তরবঙ্গের গ্রামে গ্রামে বিজেপি বিরুদ্ধে, মোদি সরকারের বিরুদ্ধে জোর প্রচার শুরু করে দিয়েছে।
কে এই তিতুমীর? নাহ ইনি ইতিহাসের সেই বিখ্যাত তিতুমীর নন যিনি বাঁশের কেল্লা তৈরি করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে বীরের মতো মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলেন। এই তিতুমীর বাংলার এক লোকশিল্পী মাত্র। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্প নিয়ে গত এক দশক ধরে নিজেই গান বাঁধেন তিনি। তারপর গলায় দোতারা ঝুলিয়ে সেই গান নিজেই গ্রামে গ্রামে গেয়ে বেড়ান। এভাবেই এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছন তিনি। সামনেই রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। সেই নির্বাচনের আগে বাংলার প্রতি কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের বঞ্চনা নিয়ে বার বার সরব হয়েছেন বাংলার অগ্নিকন্যা তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অগ্নিকন্যার প্রতিবাদের ভাষাই যেন নতুন সুর পেয়ে গিয়েছে তিতুমীরের গলায় আর দোতারার তারে। একশো দিনের কাজের টাকা দেওয়ার দাবিতে তাই গান বেঁধেছেন তিতুমীর। এই গানকে হাতিয়ার করেই কোচবিহার জেলার একের পর এক গ্রাম ঘুরে জনমত গড়ে তুলছেন তিনি। গ্রামের লোকেরাও মাথা দোলাছেন সেই গানের সুরে সুরে। যারা তিতুমীরের সেই গান নিজের মনেই গুনগুন করে গেয়ে উঠছেন তাঁদের দাবি, ‘অনেকদিন ধরেই তিতুমীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গান লিখে, নিজেই গেয়ে গ্রামে প্রচার চালান। এবার তিনি একশো দিনের টাকা দেওয়ার দাবিতে গান বেঁধেছেন। আসলে তিনি আমাদের জীবনযন্ত্রনার কষ্টটা বোঝেন। তাই মানুষ একশো দিনের কাজ করল, অথচ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আমাদের ন্যায্য কাজের টাকা দিচ্ছে না। সেসব কথাই গানের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তিনি। আমরাও চাই, আমাদের বকেয়া কাজের টাকা দ্রুত মিটিয়ে দিক মোদির সরকার।’
বছর পঁয়তাল্লিশের তিতুমীরের আয় বলতে কৃষিকাজ আর নয়ারহাট বাজারে থাকা তাঁর একটা ছোট্ট দোকান। কোচবিহার জেলার গ্রামীণ এলাকার মানুষের সচেতনতার জন্য তিনি দীর্ঘদিন থেকে গান বেঁধে তা নিজেই গেয়ে বেড়ান তিনি। বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে থাকা গ্রামের মানুষের কাছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পও তুলে ধরেন তিনি। কীভাবে সেই প্রকল্পের সুবিধা পাবে, কীভাবে কোথায় আবেদন করতে হবে, তাও থাকছে তাঁর গানে। গানের মাধ্যমে কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, গতিধারা, মুক্তধারা, যুবশ্রী, খাদ্যসাথী, লোকপ্রসার ভাতা, কৃষকবন্ধু প্রকল্পের কথা উঠে এসেছে। এছাড়াও তাঁর গানে জায়গা করে নিয়েছে এনআরসি ও সিএএ বিরোধিতাও। মমতা বন্দ্যোপাধায়ের ভক্ত তিতুমীর কথায়, ছোটবেলা থেকে গান গাই। মানুষের যন্ত্রণার কথা তুলে ধরাই আমার কাজ।