নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) বার বার সতর্ক করেছেন। বলেছেন, ‘মানুষ এই অন্যায় মেনে নেবে না। মানুষের হকের টাকা ফিরিয়ে দিন।’ তিনি বার বার প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, চিঠি দিয়েছেন, বাংলার হকের টাকা বাংলাকে দিতে। একাধিকবার এই সরব হয়েছেন তৃণমূলের(TMC) সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও(Abhishek Banerjee)। বাংলার হকের টাকা আটকে রাখায় বার বার কেন্দ্র সরকার ও বিজেপিকে নিশানাও বানিয়েছেন। রাজ্যের আধিকারিকেরা একাধিকবার কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প, গ্রামীণ আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার টাকা ছাড়ার জন্য। কিন্তু কোনও কিছুতেই কিছু হয়নি। উল্টে বাংলার বিরোধী দলনেতা বেশ গর্বের সঙ্গে বুক ঠুকে একের পর এক সভা থেকে দাবি করে গিয়েছেন, কীভাবে তিনি টাকা আটকে দিয়েছেন বা আগামী দিনেও টাকা আটকে দেবেন। কিন্তু পঞ্চায়েতে ভরাডুবির পরে এখন বাংলার পদ্মনেতারাই মানছেন, টাকা আটকেই সর্বনাশ হয়েছে। কার্যত বাংলার বুকে রাজ্য সরকার ও তৃণমূলকে প্যাঁচে ফেলতে গিয়ে কার্যত নিজের পায়ে কুড়ুল মেরে বসে আছে বিজেপি(BJP)।
আরও পড়ুন স্বল্প সঞ্চয়ে দেশের সেরা মমতার বাংলা
পঞ্চায়েতের নির্বাচনে কার্যত ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। পদ্মনেতারা যতই সন্ত্রাস সন্ত্রাস করে চিৎকার জুড়ে দিন না কেন, বাম ও কংগ্রেসের বড় সংখ্যার আসন প্রাপ্তি তাঁদের সেই দাবিকে ঠুনকো বানিয়ে দিয়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে জঙ্গলমহল, মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক থেকে রাজবংশী ভোট ব্যাঙ্ক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সমর্থন মেলেনি সংখ্যালঘু থেকে আদিবাসীদেরও। সেই ভরাডুবির জেরেই বঙ্গ বিজেপির নেতারা বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে নেমেছিলেন। আর সেখানেই তাঁদের প্রাথমিক মূল্যায়ণ, ১০০ দিনের কাজ থেকে আবাস, সড়ক যোজনা—গ্রামবাংলার একের পর এক প্রকল্পের টাকা আটকানোই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন নিজেদের সরকারকে প্রভাবিত করে একাধিক প্রকল্পে রাজ্যের বকেয়া টাকা আটকে দেওয়ার যে পন্থা পদ্মপার্টির নেতারা নিয়েছিলেন, সেই পন্থাই এখন অজগর হয়ে তাঁদেরই গিলে খাচ্ছে। আর এই টাকা আটকানোর কথা সব থেকে বেশি বুক ঠুকে বলেছেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)। আর এখন তাই বঙ্গ বিজেপির এই পরাজয়ের জন্য দলের নীচুতলার কর্মী থেকে দলের আদি নেতারা শুভেন্দুকেই কাঠগড়ায় তুলছেন। তাঁদের সাফ দাবি, শুভেন্দুর জন্যই এই বিপর্যয় নেমে এসেছে।
আরও পড়ুন জমি বিক্রির কেলেঙ্কারি, বিপাকে ৬৫ ভূমি আধিকারিক
যদিও এই তত্ত্ব মানতে নারাজ শুভেন্দুর অনুগামীরা। তাঁরা পাল্টা দাবি করছেন, শুভেন্দুর জন্যই বিজেপির আসন এবার বেড়েছে। কেননা শুভেন্দুই পেরেছেন শাসকের চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে। সেই কারণেই বাংলার অনান্য জেলায় বিজেপি যা ফল করেছে তার থেকে বেশি ভাল ফল করেছে পূর্ব মেদিনীপুরের মাটিতে। সেখানে বিজেপি সব থেকে বেশি সদস্য পাঠাতে পেরেছে জেলা পরিষদে, সব থেকে বেশি পঞ্চায়েত সমিতি জিতেছে এবং সব থেকে বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী হয়েছে। রাজ্যের অন্য কোনও জেলায় তা হয়নি। আর তাই অমিত শাহও(Amit Shah) শুভেন্দুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ট্যুইট করে। যদিও দলের আদি নেতা থেকে কর্মীরা সবাই একযোগে মানছেন, টাকা বন্ধ করে তৃণমূলকে ধাক্কা দেওয়ার কৌশল কার্যত ব্যুমেরাং হয়েছে পঞ্চায়েত ভোটে। মানুষ বিজেপির দিক থেকেই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। রাজ্যের প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থানের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রকল্প ১০০ দিনের কাজের অর্থ প্রায় দু’বছর ধরে বন্ধ। কর্মহারা কয়েক কোটি গ্রামবাসী। তৃণমূল প্রচার করেছে, বিজেপি শক্তিশালী হলে আরও একাধিক প্রকল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেই আশঙ্কাতেই উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল সহ বাংলার বহু ‘উর্বর’ জেলায় ধস নেমেছে পদ্মপার্টির জনসমর্থনে।
আরও পড়ুন বাংলাজুড়ে এক ও অভিন্ন Outdoor Network, সিদ্ধান্ত রাজ্যের
এখন বিজেপির নেতারা মানছেন, ‘টাকা আটকে রাখার খেসারত দিতে হচ্ছে পার্টিকে। আমাদের নেতারা দিল্লির বিভিন্ন মন্ত্রকে দুর্নীতির লম্বা-চওড়া অভিযোগ দিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছেন। তার ভিত্তিতে একাধিক প্রকল্পের টাকা আটকে যাচ্ছে। অথচ কেন্দ্রীয় টিম এসে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগের কোনও সারবত্তা পায়নি। উল্টে কলকাতা হাইকোর্টের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রকে। আদালত যেখানে হকের টাকা আটকে না রাখার পক্ষে রায় দিচ্ছে, তার বিপরীতে যেতে গিয়েই আমরা মুখ থুবড়ে পড়লাম।’ পদ্মের নেতারা মানছেন, টাকা আটকে যাওয়ার সমস্যায় পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। মাথার ওপর ছাদ তৈরির কাজ আটকে থাকার সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই তিক্ত অভিজ্ঞতায় প্রভাবিত হয়েছেন আরও হাজার হাজার বাসিন্দা। ওই নেতারা আরও মানছেন, ২০১৮ সালে যত সংখ্যক গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি দখল করেছিল, সেখানেও এবার খারাপ ফল হয়েছে। আগেরবার জেতা বহু পঞ্চায়েতই এবার হাতছাড়া হয়েছে।