নিজস্ব প্রতিনিধি: দিন যত গড়াচ্ছে বঙ্গ বিজেপি(BJP) ততই যেন শত ধারায় ভাগ হয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই বিদ্রোহ, বিদ্রোহ আর বিদ্রোহ। প্রতিদিনই দলের কোনও না কোনও নেতা দলের বিরুদ্ধেই সরব হচ্ছেন। কেউ মুখ খুলছেন, কেউ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। আর এবার তো রীতিমত সভা ডেকে দলের জেলা সভাপতিকেই হটাবার ডাক উঠে গেল। আর তাও কোনখানে? নাহ, যে জেলায় বিজেপি উনিশের লোকসভা ও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্য পেয়েছে সেই জলপাইগুড়িতে(Jalpaiguri)। সেখানে শ্লোগান(Slogan) উঠল, ‘বাপি হটাও, বিজেপি বাঁচাও’। এই বাপি হলেন জলপাইগুড়ি জেলার বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামী(Bapi Goshwami)। তবে শুধু জেলা সভাপতিকে হটাবার ডাক দিয়েই ক্ষান্ত হননি দলের বিদ্রোহীরা। তাঁরা পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি প্রার্থীদের হারিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। সেই সঙ্গে দলে থেকেও সমান্তরাল ভাবে আলাদা সংগঠন চালাবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ওই বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা।
রবিবার বিকেলে জলপাইগুড়ি শ্রী দয়াল হলে বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সমস্ত বিধানসভা থেকে বাছাই করা প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা। বৈঠকে জেলা সভাপতিকে তুলোধুনো করেন বিক্ষুব্ধ নেতারা। কেউ আবার বলেন জেলা সভাপতি বদল না হলে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থীদের হারিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি ‘এলাকায় গেলে জেলা সভাপতির ঠ্যাং ভেঙে দেব’ এই মন্তব্যও করেন কেউ কেউ। এমনকি জেলা সভাপতি তাঁদের দলীয় কর্মসুচী করতে বাধা দিলে জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে সুনামি হবে। যতদিন না বর্তমান জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামিকে রাজ্য নেতৃত্ব সরিয়ে দিচ্ছে, ততদিন নিজেরাই দলের বিভিন্ন কর্মসুচী বিজেপির ব্যানারে পালন করবেন বলে সাফ জানিয়ে দেন তাঁরা।
রবিবারের বৈঠকে বিজেপির ময়নাগুড়ি ব্লক নেতা অনুপ পাল জানান, ‘১৯৮৯ সাল থেকে আজও বিজেপি করছি। অনেক বছর আগে দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বর্তমান জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামি নতুন দল ‘আমরা বিজেপি’ গঠন করেছিলেন। আমি ও আমার নেতৃত্ব বিধায়ক কৌশিক রায়কে জিতিয়েও আজ দলে উপেক্ষিত। এই দল আমাদের রাখুক বা না রাখুক বিজেপিতে থেকেই সংগঠন করব। আমি রবিবার জেলা কার্যকরি কমিটির বৈঠকে ডাক পাইনি।’ আবার দলের জেলা কমিটির বর্ষীয়ান নেতা সুখদেব সরকার বলেন, ‘কেন্দ্র ও রাজ্য নেতৃত্বের অনেকেই অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র। জেলার ধান্দাবাজ কিছু নেতার সঙ্গে এই ধৃতরাষ্ট্র নেতৃত্ব আটঘাট বেঁধে আঁতাত করেছে। কবে এদের কোমর সোজা হবে জানি না। জেলা বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে এই ধান্দাবাজেরা অশান্ত পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে।’
ধুপগুড়ি টাউন মন্ডলের নেতা গৌতম সরকার বলেন, ‘পুরএলাকার সবকটি ওয়ার্ডে বুথে বুথে প্রচার করে লিড দিলাম। এবার পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি প্রার্থীদের হারিয়ে দেব। ধূপগুড়ি পুরসভার যে ভোট আসছে। সেখানেও বিজেপি হারবে। আমি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বিজেপি করছি। ১৮ দিন জেল খেটেছি বিজেপির জন্য। অথচ আমরাই বাদ। দল যদি ভাল না বাসে, মর্যাদা দিতে না পারে তাহলে দল তার ফল পাবে। জেলা সভাপতি এলাকায় এলে ঠ্যাং ভেঙে দেব।’ বিক্ষুদ্ধ নেতাদের মুখ অলোক চক্রবর্তী জানান, ‘আমরা জেলা সভাপতির অপসারন চেয়েছি। বিজেপিতে থেকেই দলের নয়, জেলা সভাপতির বিরোধীতা করা হবে। কিন্তু বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারি সমস্ত কর্মসুচী সাফল্যের সঙ্গে পালন করব।’ আর যার বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ সেই জেলা বিজেপির সভাপতি বাপী গোস্বামী জানিয়েছেন, ‘যারা সভা করে বলেন পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে দেওয়া হবে তাঁদের কাছে আর কি আশা করা যায়। এদের সঙ্গে কোনও আপস করা হবে না। এদের করা মন্তব্যের ওপর আমি কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না।’