নিজস্ব প্রতিনিধি: সিএএ আন্দোলনের অন্যতম প্রতিবাদী নেতা ও প্রাক্তন বাম ছাত্র নেতা আনিস খানের খুনের ঘটনায় ক্রমশই উত্তাল হয়ে উঠছে রাজ্য রাজনীতি। রবিবার সকালে আনিস খুনের তদন্তে যাওয়া পুলিশকে ঘিরে যেমন প্রবল বিক্ষোভ দেখিয়েছে মারমুখী জনতা তেমনি এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেছে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-ও। তার মধ্যেই এই ঘটনাকে ঘিরে আবারও কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। শনিবারও তিনি বার্তা দিয়েছিলেন, এদিনও আবার তা দিয়েছেন।
রবিবার এই ঘটনায় ফিরহাদ জানিয়েছেন, ‘বহিরাগত দুষ্কৃতীদের দ্বারা আনিসকে খুন করা হতে পারে৷ যে ভাবে পুলিশের পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকে আনিসকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে, তা এক কথায় নজিরবিহীন৷ উত্তরপ্রদেশ আর বিহারের মতো রাজ্যগুলিতে এভাবে মানুষকে মারা হয়৷ বাংলার সংস্কৃতিতে এসব হয় না। আনিস খান হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত করে আদালতে তথ্য পেশ করবে পুলিস৷ দোষীরা যথাযত শাস্তি পাবে৷ গোটা বিষয়টা তদন্ত সাপেক্ষ। রাজ্যের পুলিস-প্রশাসন যথেষ্ট সক্রিয়। কীভাবে এবং কেন এই ধরনের নৃশংস খুন করা হল, তার তদন্ত শুরু হয়েছে। নিরপেক্ষ বিচার করে দোষীকে কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত যাতে এধরনের কাজ ভবিষ্যতে রাজ্যে না হয়৷ আইন আইনের পথে চলবে, দোষীদের অবশ্যই সাজা হবে। এর পিছনে বাইরের কোনও শক্তির মদত আছে।’
উল্লেখ্য শুক্রবার মাঝরাতে পুলিশের পরিচয় দিয়ে হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমায় আমতা থানার সারদা গ্রামের খাঁ পাড়ায় আনিসের বাড়িতে চড়াও হয় ৪ দুষ্কৃতী। আনিসের বাবার বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে তাঁরা আনিসকে মারতে মারতে বাড়ির ৩তলার ছাদে নিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই তাঁকে ঠেলে নীচে ফেলে দেয়। গোট ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ অন্ধকারে রয়েছে। পুলিশের পোশাক পরে কারা এই নৃশংস ঘটনা ঘটিয়ে গেল, কেনই বা তাঁকে তিনতলা থেকে ঠেলে খুন করা হল, এখন সেটাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে তদন্তে একচুলও অগ্রগতি হয়নি। বরঞ্চ রহস্য ক্রমেই জটিল হচ্ছে, উঠছে বহু প্রশ্নও। এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আনিস খুনের বিচার চেয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। হ্যাজ জাস্টিস ফর আনিস খান হ্যাশট্যাগ দিয়ে অবিলম্বে দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানানো হচ্ছে।
রবিবার সকাল থেকে আনিসের মৃত্যু নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে প্রয়াত ছাত্রনেতার গ্রাম। পুলিশকে ঘিরে এদিন দফায়-দফায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ, গতকাল উত্তেজনা ছড়ালেও পুলিশের দেখা পাওয়া যায়নি। এদিন সকালে পুলিশ এলাকায় ঢুকতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। কেন গতকাল নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি? প্রশ্ন পরিবার, পরিজনদের। চাপের মুখে পড়ে শেষমেশ ফিরে যেতে হয় পুলিশকে। এই বিষয়ে গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান জানিয়েছেন, ‘মানুষ ক্ষেপে রয়েছে। কারণ আনিস সবসময় সাংস্কৃতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সবাইয়ের আদরের। আমি গ্রামপ্রধান হিসেবে চাইব যাতে ও সুবিচার পায় যেন।’