নিজস্ব প্রতিনিধি: ছিলেন কংগ্রেসে, এসেছিলেন তৃণমূলে, পরে পা বাড়ান বিজেপিতে। এবার যাত্রা গারদের পিছনে। তিনি নীলরতন আঢ্য, মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান। শনি সকালেই তাঁকে গ্রেফতার করেছে বহরমপুর থানার পুলিশ। মহিলাদের প্রতি কটূক্তি ও অশালীন ইঙ্গিতের অভিযোগে এই নেতাকে তাঁর নিজের বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিনই তাঁকে বহরমপুর জেলা আদালতে পেশ করা হবে। আর এই ঘটনাকে ঘিরে বহরমপুরের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ জেলার রাজনীতিতে রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পুরনির্বাচনের প্রাক্কালে নীলরতন আঢ্যের গ্রেফতারিতে এখন অনেকটাই চাপে পড়ে গেল বিজেপি ও কংগ্রেস শিবির।
নীলরতন আঢ্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ নেতা হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। কার্যত তাঁর হাত ধরেই তিনি বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান হন। কিন্তু পরে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে সদলবলে যোগ দেন তৃণমূল। তার জেরে তিনি চেয়ারম্যান পদ ধরে রাখার পাশাপাশে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও পেয়েছিলেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনিই ফের অনুগামীদের নিয়ে যোগ দেন বিজেপিতে। তার জেরে তাঁকে বহরমপুর পুরসভার প্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। বহরমপুর শহর তো বটেই গোটা মুর্শিদাবাদ জেলাই একসময় যেমন কংগ্রেসের দুর্গ হিসাবে পরিচিত ছিল ঠিক তেমনি তা অধীরের গড় হিসাবেও সুপরিচিত ছিল। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে গোটা মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে তৃণমূল ঝড় বয়ে গেলেও বহরমপুর ও মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে জয়ী হয় বিজেপি। তৃণমূলের অভিযোগ, তাঁদেরকে ঠেকাতেই তলে তলে বোঝাপড়া হ্যে গিয়েছিল কংগ্রেস ও বিজেপির। দুই দলের ভোট পড়েছিল একবাক্সেই। তার জেরেই ওই দুই আসনে জয়ী হয় বিজেপি। গোটা ঘটনায় মদত দিয়েছিলেন অধীরও।
এবার পুরনির্বাচনের প্রাক্কালে সেই তৃণমূলই কিন্তু তলে তলে কংগ্রেস ও বিজেপির বোঝাপড়ায় ভাঙন ধরাতে উঠে পড়ে লেগেছে। বিজেপির তরফ থেকে নীলরতন আঢ্যকেই বহরমপুরের সম্ভাব্য পুরপ্রধান হিসাবে তুলে ধরে পুরনির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। এদিন আঢ্য গ্রেফতার হতেই তাতে কার্যত বড়সড় ধাক্কা নেমে এল। এই অবস্থায় চাপে পড়ে গিয়েছেন আঢ্যের অনুগামীরাও। আসন্ন পুরনির্বাচনে বহরমপুরে প্রকাশ্যে কংগ্রেস ও বিজেপির বোঝাপড়া হোক বা না হোক, আঢ্যের গ্রেফতারি তৃণমূল বিরোধী শিবিরের সব হিসাব এবার গুলিয়ে দিল। কার্যত আঢ্যের শিবির এবার বাধ্য হয়ে গেল তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করতে। আর তার জেরে বহরমপুর পুরসভা দখলের লড়াইয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে গেল তৃণমূল। আগামী দিনে সম্ভবত তৃণমূল জয়ী হলে তবেই নীলরতন আঢ্যের মামলা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা থাকবে।