নিজস্ব প্রতিনিধি: ঘোষিত সময় থেকে পিছু হটছে রাজ্য সরকার। অন্তত তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে নবান্ন(Nabanna) সূত্রে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজারহাট নিউটাউনের বুকে বসেছিল বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের(Bengal Global Business Summit) আসর। সেই সময়েই ঘোষণা করা হয়েছিল এবার থেকে প্রতি বছর এই সম্মেলনের আসর বসবে। পাশাপাশি ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল ২০২৩ সালে এই সম্মেলন বসবে ১, ২ এবং ৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এখন সেই সময়সীমা থেকে পিছু হটছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী বছর এই সম্মেলন আয়োজিত হতে পারে নভেম্বর মাসে। এই দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসাবে যা জানা যাচ্ছে তা কিন্তু রীতিমত চমকপ্রদ। বাংলার(Bengal) বুকে আয়োজিত হওয়া এই শিল্প সম্মেলনে এখনও অবধি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) যোগদান করেননি। কিন্তু চলতি বছরের এই বাণিজ্য সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শোনা যাচ্ছে, ২০২২ সালের বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনে মোদি যোগদান করতে না পারলেও ২০২৩ সালের সম্মেলনে তিনি যোগদান করতে পারেন। আর সেই কারণেই এই সম্মেলনের আসর ফেব্রুয়ারি থেকে পিছিয়ে নভেম্বরে করতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই ২০২৩ সালের বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনের উদ্বোধন হতে পারে, এমনই ইঙ্গিত মিলেছে নবান্ন সূত্রে।
আরও পড়ুন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের এবার মরণোত্তর হাত প্রতিস্থাপন এসএসকেএমে
গুজরাতের বুকেও মোদি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এই ধরনের শিল্প সম্মেনের আয়োজন করেছেন। অনেকেরই অভিযোগ, কার্যত মোদিকে টেক্কা দিতেই মমতা বাংলার বুকেও এই ধরনের শিল্প সম্মেলনের আয়োজন করা শুরু করেছেন। যদিও দুটির মধ্যে তুল্যমূল্য বিচার করলে গুজরাতের শিল্প সম্মেলন অনেক বেশি সফল। তবুও মমতা হার না মানতে চাওয়া নেত্রী। তাঁর হার না মানা মনোভাবই তাঁকে রাজপথের আন্দোলন থেকে বাংলার মসনদে তুলে এনেছে। ২০২২ সালের বিশ্ববঙ্গ সম্মেলন এখন পর্যন্ত সব থেকে সফল সম্মেলন বলে অনেকেই অভিহিত করে থাকেন। যদিও রাজ্যের বিরোধিদের অভিযোগ, সম্মেলনে শুধু প্রতিশ্রুতি আসে, তার বাস্তবায়ন ঘটতে দেখা যায় না। রাজ্য সরকার অবশ্য এই অভিযোগ খন্ডন করতে কোমর বেঁধেছে। একদিকে যেমন তাঁরা রাজ্যে শিল্পতালুকের সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে তেমনি নতুন বছরে ৫০টির সঙ্গে আরও ১২টি পরিষেবা যুক্ত করা হচ্ছে শিল্পসাথী সিঙ্গল উইন্ডো পোর্টালে। জোর দেওয়া হচ্ছে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন শিল্প পার্ক গড়ে তোলার বিষয়েও। সেই জন্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের হাতে থাকা জমিতে শিল্পতালুক গড়ে তোলার পাশাপাশি অন্যান্য দফতরের মালিকানাধীন যেসব জমি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, সেখানেও শিল্পতালুক গড়ার উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য।
আরও পড়ুন আসানসোলের ঘটনা চক্রান্ত নয়, জানালেন শুভেন্দু নিজেই
প্রসঙ্গত, শিল্পতালুক গড়ে বিনিয়োগ টানতে ২০২১ সালের মাঝামাঝি একটি বিশেষ ইনসেনটিভ স্কিম চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ব্যক্তি মালিকানায় পাঁচ একর জমি থাকলেই শিল্পতালুক গড়ার আবেদন করা যাবে বলে রাজ্য সরকার ঠিক করে। রাজ্যে এরকম ৪৫টি শিল্পতালুক গড়ে উঠছে। আবার রাজ্য সরকারের দেওয়া জমিতে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের মাধ্যমে ৫৬টি শিল্পতালুক গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে এসব জমির দাম কমানো হয়েছে। গত সপ্তাহেই এ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দিয়েছে অর্থদপ্তর। কিন্তু এসব কিছুকেই ছাপিয়ে যেতে চলেছে ২০২৩ সালের বিশ্ববঙ্গ সম্মেলন। যদি মোদির হাত ধরেই সেই সম্মেলনের উদ্বোধন হয় তাহলে নিঃসন্দেহে দেশের তাবড় তাবড় শিল্পপতিরা তাতে যেমন যোগ দেবেন তেমনি বাংলার জন্য শিল্প প্রকল্প বা বিনিয়োগের কথাও ঘোষণা করবেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সম্ভাব্য এই মোদি-মমতা যুগ্ম উপস্থিতির মঞ্চ নিঃসন্দেহে দেশের রাজনীতির মঞ্চেও বড়স্র চমক হয়ে উঠে আসতে চলেছে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তাঁর উপস্থিতি থাকার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হলেই রাজ্য সরকার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের দিন ঘোষণা করে দিতে পারে।