নিজস্ব প্রতিনিধি: ২দিনের বঙ্গ সফরে এসে মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পেট্রাপোলে(Petrapole) যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah)। সেখানে তিনি দেশের সীমান্ত রক্ষায় BSF’র ভূমিকা নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। রাজ্যে BSF’র ভূমিকা নিয়ে যখন একের পর এক প্রশ্ন উঠছে, তখন বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়েই BSF-কে দরাজ হস্তে সার্টিফিকেট দিয়ে শাহ কার্যত নবান্নকেই খুঁচিয়ে দিলেন। কিন্তু শাহ যাই বলুন না কেন, বাংলার বুকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা মাত্রই জানেন BSF ঠিক কী জিনিস। মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল মহকুমার জলঙ্গি(Jalangi) ব্লকের পদ্মাপারের চরের বাসিন্দারা এদিন শাহি ভাষণ শুনে রীতিমত ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা এদিন সরব হয়েছেন BSF’র অত্যাচার নিয়ে। কার্যত শাহ যা বলেছেন এদিন ঠিক তার বিপরীত সুর শোনা গেল এই চরের বাসিদনাদের গলায়।
আরও পড়ুন হিন্দুস্থান কেবলসের মাঠে রাত্রিবাস, অভিষেকে অস্বস্তি বিজেপির
শাহ এদিন BSF-কে নিয়ে ঠিক কী বলেছেন? এদিন পেট্রাপোলে BSF’র এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারতের জমি সুরক্ষা করতে BSF কোনও কসুর রাখে না। BSF বরফের পাহাড় থেকে থর মরুভুমি, ভূমি সীমা থেকে নদী নদী সীমান্ত, দেশের সুরক্ষায় কোনও কসুর করে না। BSF ছাড়া ভারতের ভূমিসীমার সুরক্ষা সম্ভব হত না। BSF’র জন্যই দেশে আজ সুরক্ষার বাতাবরণ। প্রত্যেক নাগরিক নিজেকে সুরক্ষিত বোধ করছেন।’ আর এই সুরক্ষার প্রশ্নের ভিন্ন সুর শোনা গেল চর জলঙ্গির বাসিন্দাদের মুখে। কী বললেন তাঁরা? তাঁদের দাবি, ‘বাজারে যেতে গেলে তল্লাশি। জিনিসপত্র কিনে বাড়ি ফেরার তল্লাশি। ওত পেতে থাকে BSF জওয়ানরা। লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখে চলে তল্লাশি। আমাদের জীবন যেন তল্লাশিতে মোড়া! প্রচন্ড রোদ আর গরমে তল্লাশি দিতে লাইনে দঁড়িয়ে হাঁসফাঁস করে মরতে হয়।’ জলঙ্গি ব্লকের পদ্মার পূর্ব পাড়ের চরে রয়েছে কয়েকটি জনবসতি। যেমন, ফরাজিপাড়া, টলটলি, পরাশপুর, চর পরাশপুর, উদয়নগর, খাসমহল। চরের বাসিন্দাদের বাজার করতে আসতে হয় পদ্মা পেরেয়ি জলঙ্গি, সরকারাপাড়া, ঘোষপাড়া এলাকায়। আসার সময় একদফা তল্লাশি। ফেরার সময় বাজারের ব্যাগ উল্টো করে খতিয়ে দেখে বিওপির বিএসএফ জওয়ানরা। সারা বছর একইভাবে তাঁদের বিএসএফের মুখোমুখি হতে হয়। তাতে চরম ক্ষুব্ধ চরের বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন শান্তিনিকেতনকে অনেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মভূমি বলেন, নাড্ডাকে খোঁচা মমতার
চরের বাসিন্দাদের দাবি, শুধু তল্লাশিতেই থেমে থাকে না সবকিছু। আঁধার নামলেই অন্য অত্যাচারের মুখে পড়তে হয়। মেয়েরা রাতে বাড়ি থেকে বার হতেই পারে না। পুরুষেরাও বাদ যান না BSF জওয়ানদের অত্যাচারের হাত থেকে। চরের কিছু বাসিন্দা অবশ্যই পাচারে জড়িত। কিন্তু সবাই নন। অথচ সেই স্বল্পসংখ্যক মানুষদের জন্যই BSF জওয়ানদের অত্যাচার মুখ বুজে সয়ে যেতে হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দাদের। চরের বাসিন্দারা এমনিতেই বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ রয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় জল, বিদ্যুতের সমস্যা এখনও মেটেনি। বর্ষার দু’তিনমাস কার্যত জলেই বাস করতে হয় তাদের। বাসিন্দাদের আরও ক্ষোভ, রাতে কোনও প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বিডিওর কাছে ‘পারমিশন’ নিতে হয়। তার পরেই BSF’র কাছে ছাড়পত্র মেলে। অনেক সময় দেরিও হয়ে যায়। হাসপাতালে যাওয়ার আগেই প্রসব হয়ে যায়।