নিজস্ব প্রতিনিধি: তিন ধারায় বিভক্ত হয়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপি(Bengal BJP), সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে। একটি ধারা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর(Adhikari), একটি ধারা দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের(Sukanta Majumdar) এবং তৃতীয় ধারাটি দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের(Dilip Ghosh)। তৃতীয় ধারাটি এখন কার্যত কোনঠাসা দশায় দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু সেখানেও দলের আদি নেতা কর্মীদের ভিড়। বাকি দুটি দল কার্যত ছড়ি ঘোরাচ্ছে দলের অন্দরে বাহিরে। সেই ছড়ি ঘোরাতে ঘোরাতেই এখন গৃহযুদ্ধে মেতে উঠেছে ২টি শিবির। নেপথ্যে রাজ্যসভার নির্বাচন। আগামী ২৪ জুলাই বাংলার পূর্ণ সময়ের ৬টি রাজ্যসভার আসনের নির্বাচন এবং ১টি আসনের উপনির্বাচন। বঙ্গ বিজেপি থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উপনির্বাচনের আসনে কোনও প্রার্থী দেওয়া হবে না। কিন্তু বাকি ৬টির মধ্যে ১টি আসনে দলের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত বলে শুধুমাত্র সেই আসনেই প্রার্থী দেওয়া হবে। আর সেই প্রার্থী কে হবেন তা নিয়েই এখন কার্যত গৃহযুদ্ধ বেঁধে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপিতে।
আরও পড়ুন ২১’র মঞ্চ থেকেই প্রচার শুরু ২৪’র, বড় সিদ্ধান্ত তৃণমূলের
কেন যুদ্ধ? বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভেন্দু চান এই প্রার্থী হন মিঠুন চক্রবর্তী(Mithun Chakrabarty)। সুকান্ত চান প্রার্থী হোন শমীক ভট্টাচার্য(Shamik Bhattacharya)। আবার দিলীপ গোষ্ঠী চান প্রার্থী হোক অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। এই ৩জনের মধ্যে প্রার্থী কে হবেন, নাকি এই তিনের বাইরে গিয়ে কেউ প্রার্থী হবেন এখন তা নিয়েই দলে শুরু হয়ে গিয়েছে তীব্র জল্পনা। সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভেন্দু মিঠুনকে প্রার্থী করতে চেয়ে দিল্লিতে গিয়ে দরবার করে এসেছেন। মিঠুন এর আগে তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে রাজ্যসভায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে সেভাবে কোনওদিনই রাজ্যসভায় সক্রিয়া হতে দেখা যায়নি। কার্যত অধিবেশনের বড় অংশই তিনি অনুপস্থিত থেকেছেন। আবার রাজ্যসভার সাংসদ পদে থাকতে থাকতেই তৃণমূলের সঙ্গে সর্বপ্রকারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের। তাই শুভেন্দু চাইলেও যে তাঁরা মিঠুনকে চটজলদি প্রার্থীঠিসাবে ঘোষণা করে দেবেন এমনটা মোটেও নয়।
আরও পড়ুন শান্তনুর ঘুম কেড়েছে দলেরই গোঁজ প্রার্থীরা
আবার সুকান্ত গোষ্ঠী চান শমীক ভট্টাচার্যকে। এখন শমীকবাবু রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র। এর পাশাপাশি ভাল সুবক্তা ও কবি হিসাবে নাম রয়েছে তাঁর। কিন্তু তিনি আর যাই হোক হেভিওয়েট নেতা নন। যদিও বিজেপির অতিবড় দুর্দিনেও তিনি রাজ্য বিধানসভায় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, সেটাও ভোটে জিতে। তবে তাঁকে এল লাফে রাজ্যসভার সাংসদ করে দিতে দলের শীর্ষ নেতাদেরই ভাবতে হচ্ছে দুইবার। দিলীপ গোষ্ঠী যে অনির্বাণকে চাইছে তিনি একুশের ভোটে প্রার্থী হয়ে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহর কাছে পরাজিত হলেও গেরুয়া শিবিরে তাত্ত্বিক নেতা হিসাবেই তিনি যেমন পরিচিত, তেমনই সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গেও তাঁর যথেষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। তবে কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে এখন ৩ গোষ্ঠীর লড়াইয়ের মধ্যে শুভেন্দুকে চাপে ফেলতে সুকান্ত ও শুভেন্দু গোষ্ঠীর হাতেহাত মেলাবার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। আসলে শুভেন্দু যেভাবে দলে নিজ অনুগামীদের বসিয়ে দিচ্ছেন ও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাতে ছাড়পত্র দিয়ে চলেছে তাতে রীতিমত ক্ষুব্ধ দলের বাকি দুই গোষ্ঠীর নেতারা। এবার তাঁরা কার্যত ঠিকই করের ফেলেছেন শুভেন্দুকে ধাক্কা দিয়ে প্রয়োজনে শমীককেই দলের প্রার্থী হিসাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তুলে ধরতে। কার্যত যেন তেন প্রকারণে হোক তাঁরা শুভেন্দুর যাত্রাভঙ্গ করতে চাইছেন। আর তাতেই বেঁধেছে গৃহযুদ্ধ বঙ্গ বিজেপির অন্দরে।