নিজস্ব প্রতিনিধি: গ্রামের উন্নয়নের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। গ্রামীণ এলাকায় গণতন্ত্রকে পৌঁছে দিতেও এই ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু শুনলে অবাক হয়ে যাবেন উত্তর ২৪ পরগনা(North 24 Pargana) জেলার ব্যারাকপুর(Barracpur) মহকুমার আমডাঙা(Aamdanga) ব্লকের ২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে গত ৫ বছরে ১ বারের জন্যও কোনও বোর্ড গঠন করা হয়নি। বাংলায় শেষবার পঞ্চায়েত নির্বাচন(Panchayat Election) হয়েছিল ২০১৮ সালে। আর এখন ২০২৩ সাল। এই বছরেরই মে মাস নাগাদ আরও একটি পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। কিন্তু মাঝের এই ৫ বছরে একটি বারের জন্যই বোর্ড গঠিত হয়নি আমডাঙার তারাবেড়িয়া(Taraberia GP) ও বোদাই গ্রাম পঞ্চায়েতে(Bodai GP)। কার্যত আদালতে এই নিয়ে মামলা হলেও এখনও সেই মামলার কোনও রায় দেয়নি আদালত। এদিকে আরও একতা পঞ্চায়েত নির্বাচনে দোরগড়ায় কড়া নাড়ছে। আদালত আগামী দিনে এই মামলায় রায় দিলেও তা কী আর গুরুত্ব পাবে যদি তার আগেই আরও একটা পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়ে যায়!
আরও পড়ুন 100 Crores, গেল কার কাছে, প্রশ্ন ঘোরে নিয়োগ কাণ্ডে
কেন বোর্ড গড়া যায়নি আমডাঙার তারাবেড়িয়া ও বোদাই গ্রাম পঞ্চায়েতে? ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারাবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ৯টি আসন। সিপিএম পেয়েছিল ৭টি আসন। বিজেপি, কংগ্রেস ও নির্দল পেয়েছিল ১টি করে আসন। বোর্ড গড়তে প্রয়োজন ছিল ১০জন সদস্যের সমর্থন যা কোনও দলের কাছেই ছিল না। এর পাশের গ্রাম পঞ্চায়েতই হল বোদাই। সেখানে ১৫টি আসনের মধ্যে সিপিএম ও তৃণমূল ৫টি করে আসন জিতেছিল। বিজেপি পেয়েছিল ২টি আসন। বাকি ৩টি আসন যায় নির্দলদের দখলে। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়তে দরকার ছিল ৮জন সদস্যের সমর্থন। কিন্তু বাম বা তৃণমূলের কারোর কাছেই তা ছিল না। আবার এই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের লাগোয়া মরিচা গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০টি আসনের মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৯টি আসন। তৃণমূল পেয়েছিল ৮টি। বামেরা পেয়েছিল ৩টি আসন। সেখানেও বোর্ড গঠন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। ঘটনা হয়েছিল এই ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতেই তৃণমূল যাতে বোর্ড গঠন করতে না পারে তার জন্য সবাই একজোট হয়েছিল।
আরও পড়ুন জাকিরের ডেরা থেকে উদ্ধার ১৫ কোটি টাকা
তারাবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে যেদিন বোর্ড গঠন করার কথা ছিল সেদিন ভোর রাত থেকেই শুরু হয় অশান্তি। তারাবাড়িয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে থাকা বইগাছি গ্রামে ব্যাপক সংঘর্ষ বাঁধে বাম ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে। তার জেরে সেদিন ১ তৃণমূল কর্মী ও ৩জন বাম কর্মী খুন হন। সেই অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের গ্রামেও। অশান্তি ছড়ায় বোদাই ও মরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও। সেই অশান্তির জেরে হাজারে হাজারে মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে নির্বাচিত গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরাও ছিলেন। কয়েক মাস পরেও ওই সব এলেকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় রাজ্য সরকার ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতেই প্রশাসক বসায়। বছর ৩ আগে মরিচা গ্রাম পঞ্চায়েতে ১বিজেপি সদস্য ও ১ বাম সদস্য তৃণমূলে যোগদান করায় সেখানে বোর্ড গঠন করতে সমর্থ হয় তৃণমূল। কিন্তু তারাবেড়িয়া ও বোদাইয়ে এখনও প্রশাসকই সব কিছু কাজ দেখছেন। ফলে অস্বীকার করার উপায় নেই এই ৫ বছরে উন্নয়নের বহু কাজ অধরাই থেকে গিয়েছে। বামেদের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে এই বিষয়ে মামলা দায়ের করা হলেও এখনও অবধি সেই মামলায় কোনও রায়ই দেয়নি আদালত। তাই ২টি গ্রাম পঞ্চায়েতেই অচলাবস্থা কাটেনি। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁরা এখনও ভয়ে ভয়ে আছেন। আবারও একটা পঞ্চায়েত নির্বাচন যখন দোরে কড়া নড়ছে তখন ৫ বছর আগেকার অশান্তির ভয় আবারও তাঁদের তাঁড়িয়ে নিয়ে বেড়ানোর শুরু করে দিয়েছে। তাঁরা এখন আর কোনও ভোট চান না। চান শুধু শান্তিতে থাকতে। কিন্তু ভোট তো আসবেই, পিছু পিছু হয়তো আবারও অশান্তি ধেয়ে আসবে। গ্রামে এখনও পুলিশ পোস্টিং আছে। কিন্তু গ্রামের মানুষের অন্তর থেকে তাঁরা ভয় কাটাতে পারেননি।