নিজস্ব প্রতিনিধি: বাঙালি ও রাবীন্দ্রিক সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান হল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়(Viswabharati University)। আর সেই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটেই(Website) কিনা বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হল ‘বাঙালিরা হিপোক্রিট’ এবং ‘ভণ্ড ও কাঁকড়ার জাত’। বিবৃতি শেষে কোনও নাম উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু বিশ্বভারতীর মতো ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বাঙালি সহ মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ প্রশাসনকে আক্রমণ করা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে(Jadavpur University) ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, যাদবপুর থেকে ঘটনার মোড় বিশ্বভারতীর দিকে ঘোরানোর জন্য একাধিক কার্যকলাপ করা হচ্ছে বলে দাবি তোলা হয়েছে চারপাতার ওই বিবৃতিতে। বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠন ভিবিউফার(VBUFA) দাবি, এই বিবৃতি উপাচার্যের(VC)। কিন্তু তিনি ভয় পেয়েছেন বলেই নাম উল্লেখ করেননি। কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও কুৎসিত ভাষার নিন্দায় সরব হয়েছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ও আশ্রমিকরা।
আরও পড়ুন ‘সিপিএমের ইউনিয়ন একটা ছেলেকে মেরে ফেলল’, যাদবপুর নিয়ে সরব মমতা
উল্লেখ্য, কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যে শোরগোল পড়েছে। এরপর বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে লেখা হয়, ছাত্রের মৃত্যুর পরে র্যাগিংয়ের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাঙালিরা হঠাৎ করেই জেগে উঠেছে। বিষয়টিকে ‘দেরিতে ঘুম ভাঙা’ বলেও কটাক্ষ করে বাঙালিদের ‘উট পাখি’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ‘উটপাখি যেমন বালির নীচে মাথা রাখতে পছন্দ করে তেমনই ‘সোনার বাংলার’ বাঙালিদের উপলব্ধিও ঠিক তেমনই’ বলে উপহাস করা হয়েছে। এরপর ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। ‘যারা এই ধরনের কাজ করেছে, তারা ক্ষমার অযোগ্য। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত, যাতে বিকৃত মানসিকতার উৎস স্থায়ীভাবে উপড়ে ফেলা যায়।’
আরও পড়ুন কলকাতা হাইকোর্টে অভিষেক মামলার রায় ৫ সেপ্টেম্বর
এরপরই বাঙালিদের কড়া আক্রমণ করে বলা হয়, ‘এরা প্রথম শ্রেণির হিপোক্রিট। যারা প্রয়োজনে নিজেদেরই মতের বিরোধিতা করে। কী কারণে তারা যে কোনও সময় ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যায়, তার কারণ খুঁজে বের করা কঠিন। আসলে বাঙালিরা কাঁকড়ার জাত। কাঁকড়া যেমন তাদের নিজেদের ভাইকে ঠেলে ফেলে দিয়ে পাত্রের ঢাকনা দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে, বাঙালিরাও ঠিক তেমন। বাঙালিরা নিজেদের জাতির অহঙ্কারে রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগরের মতো মহান ব্যক্তিত্বদের গালিগালাজ করতেও দু’বার ভাবেন না।’ সম্প্রতি, শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহে দুর্গাপুজো নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিনের বিবৃতিতেও ফের দুর্গাপুজো ও বাঙালি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ব্রিটিশদের মনোরঞ্জনের জন্য দুর্গাপুজোয় দেবী দুর্গা ও ধর্মকে গৌণ করে মদ পরিবেশন করা হয়েছিল। ‘নাচিয়ে মেয়েরা’ নাচ করত।’
আরও পড়ুন নাম না করেই বার্তা নওশাদকে, আক্রমণ বিজেপিকেও
যাদবপুরের ঘটনা থেকে শান্তিনিকেতনের দিকে মোড় ঘোরানোর জন্য কাকতালীয়ভাবে ফেসবুকে ভুয়ো পোস্ট করা হয়েছিল। এই ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ অতি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। অত্যন্ত দক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই পুলিস নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না বলেও কটাক্ষ করা হয়েছে। এই বিবৃতির তীব্র নিন্দা করেছে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠন। ভিবিউফার সম্পাদক কৌশিক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, উপাচার্য ভয় পেয়েছেন। তাই নাম প্রকাশ না করে এই বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। কদর্য ভাষায় এর প্রতিবাদ জানাই।’