নিজস্ব প্রতিনিধি: কথায় বলে ঠ্যালার নাম বাবাজি। এবার সেই ঠ্যালার মুখেই পড়েছে বাংলায় ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। বাংলার বুকে সরকারি আবাস যোজনার কাজ নিয়ে বিজেপির(BJP) তরফে একাধিক অভিযোগ করা হয়েছিল কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকারের(Modi Government) কাছে। সেই অভিযোগের জেরে বাংলায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার(Pradhanmantri Awas Yojna) টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। মূল অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রের প্রকল্প বাংলার সরকার নিজেদের নাম দিয়ে চালাচ্ছে। তাতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে কেন্দ্র সরকার সম্পর্কে। এর পাশাপাশি ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগও ছিল এই প্রকল্পকে ঘিরে। সেই অভিযোগের সারবত্ত্বা খতিয়ে দেখতে দফায় দফায় বাংলায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে মোদি সরকার। সেই প্রতিনিধিদল জেলায় জেলায় ঘুরে বেশ কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণও পান যা তাঁরা ফিরে গিয়ে কেন্দ্র সরকারকে জানিয়েছিলেন। সেই রিপোর্টের জেরেই টাকা আটকে গিয়েছিল বাংলার। যদিও সম্প্রতি সেই প্রকল্পের জন্য ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি টাকা পাঠিয়েছে কেন্দ্র সরকার। সেই টাকা নিয়ে যাতে আর নতুন করে কোনও দুর্নীতি না হয় তার জন্য এবার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার জন্য আবেদনকারীদের কাছে ১৫ দফা শর্ত বেঁধে দিল নবান্ন(Nabanna)।
আরও পড়ুন একই লোকের ছবি দিয়ে একাধিক ভোটার কার্ড, চিহ্নিত ৯ লক্ষ
কারা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন তা নিয়ে অনেকেরই কোনও স্বচ্ছ ধারনা নেই। এই ১৫ দফা শর্ত বেঁধে দিয়ে নবান্ন কার্যত সেই কাজটাই করে দিয়েছে। এই শর্তগুলি দেখলেই বোঝা যাবে কারা কারা এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন আর কারাই বা তা করতে পারবেন না। নবান্নের দেওয়া শর্তের মধ্যে রয়েছে, যে পরিবারের তরফে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার জন্য আবেদন করা হবে সেই পরিবারের কেউ অতীতে ইন্দিরা আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, গীতাঞ্জলি বা অন্য কোনও সরকারি আবাসন প্রকল্পের সুবিধে পেয়ে থাকলে, কোনও ভাবেই এ বারের প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তাঁদের পাকা বাড়ি থাকলেও আবেদন করতে পারবেন না। আবেদনকারীর পরিবারের কারও মাসিক আয় দশ হাজার টাকার বেশি হলে, পরিবারের কেউ সরকারি চাকরিজীবী হলে কিংবা আয়কর বা বৃত্তিকর দিলে তাঁরাও এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। এমনকী কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যিনি ৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি ঋণ নিয়েছেন, যাদের বাড়িতে রঙিন টিভি-ফ্রিজ-এসি আছে, বাড়িতে ল্যান্ডলাইনের ফোন আছে, যন্ত্রচালিত নৌকো বা কৃষি সরঞ্জাম রয়েছে, গাড়ি বা ট্রাক্টর রয়েছে, আড়াই একর বা তার বেশি কৃষিজমি রয়েছে, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত অকৃষি জমি রয়েছে তাঁরা কেউ এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
আরও পড়ুন পঞ্চায়েতের ৩টি স্তরেই বাড়ল আসন, চাপে বিরোধীরা
তবে এর কিছুর পরেও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার প্রকল্প ঘিরে। সেকথা মাথায় রেখে নবান্নের তরফেও কোমর বাঁধা হচ্ছে। নবান্ন সূত্রেই জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার জন্য এবার যে সব আবেদন জমা পড়বে সেই সব আবেদম ভাল ভাবে খতিয়ে দেখা হবে। সবার আগে দেখা হবে আবেদনকারীর নাম ১০০ দিনের গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পে নথিভুক্ত আছে কিনা। যদি থেকে থাকে তাহলে দেখা হবে তাঁর জনকার্ড আছে কিনা। কার্ড ভুয়ো হলেই আবেদন নাকচ করে দেওয়া হবে। যত আবেদন জমা পড়বে তার দুই শতাংশ জেলাশাসক নিজে যাচাই করবেন। তিন শতাংশ ক্ষেত্রে মহকুমাশাসকের অফিস থেকে এবং ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিডিও অফিস থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে যাচাই করা হবে। তার পাশাপাশি আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, প্রাণিবন্ধু, গ্রামীণ পুলিশ ও গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মীদের নিয়ে একটি টিম তৈরি করে প্রতিটি আবেদন খতিয়ে দেখা হবে। প্রতিটি গ্রামে ৫ থেকে ১০টি দল যাবে এই সব আবেদন যাচাইয়ের করতে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সুবিধা দিতে বিভিন্ন সময়ে গ্রামাঞ্চলে শর্ত মেনেই গরিব মানুষের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে আবাস প্লাস তথ্যভাণ্ডারে। প্রতিটি গ্রাম ধরে এই তথ্যভাণ্ডারে ৪৯ লক্ষ ২২ হাজার নাম নথিভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন সিঙ্গেল মাদার ও পুরুষেরাও এবার থেকে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায়
এ বার কেন্দ্র এই প্রকল্পে রাজ্যে ১১,৩৬,৪৮৮টি বাড়ি তৈরির অনুমতি দিয়েছে। তথ্যভাণ্ডার থেকে নাম নির্বাচনের সময়ে সব দিক যাচাই করা হবে। ভুয়ো বা অযোগ্য নাম সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করা হবে। কোনও সুপারিশও এবার করা যাবে না বলেই নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। কোনও আবেদনকারী মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করেছেন বা তথ্য চেপে গিয়েছেন এমন অভিযোগ এলেই এবার আধিকারিকরা সরজমিন তদন্তে যাবেন তা খতিয়ে দেখতে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে আবেদন বাতিল করা হবে। আবার অন্য কোনও কারণে কোনও প্রকৃত দাবিদাদের নাম বাদ পড়ে গেলে তাঁর নাম যাতে ফের অন্তর্ভুক্ত হয় তার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। সেক্ষেত্রেই ওই নাম গ্রামসভা ডেকে অনুমোদন করাতে হবে।