নিজস্ব প্রতিনিধি: দিন কয়েক আগেই দেশের কিংবদন্তি সুরকার A.R.রহমান জানিয়েছিলেন তিনি তাঁর আগামী ছবি রজনীকান্তের ‘লাল সেলাম’-এর জন্যে AI-এর সাহায্য নিয়ে হালের গায়কদের কণ্ঠ ফিরিয়ে আনছেন। যার জন্যে অবশ্য তিনি সেই গায়কদের পরিবারদের উপযুক্ত অর্থ দিয়েছেন। সেই গায়কদের নাম এখন মানুষ জানে না, তাঁদেরকেই ফিরিয়ে এনে রীতিমতো ইতিহাস রচনা করতে চলেছেন এ আর রহমান। গায়কের চিন্তাভাবনা দেখে মুগ্ধ সকলে। কিন্তু AI-এর অপব্যবহার বিষয়টিকেই কোনরকম সমর্থন করছেন না দেশের আরেক কিংবদন্তি গায়িকা কবিতা কৃষ্ণমূর্তি। তাঁর মতে, কিছু শিল্পী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে সঙ্গীতকে চ্যালেঞ্জ করছেন, যা কিনা তুমুল বিতর্কিত। তাই কিংবদন্তি গায়িকা কবিতা কৃষ্ণমূর্তিবলেছেন যে AI-এর এরকম অপব্যবহারে তিনি আতঙ্কিত।এর আগে AI-কে ব্যবহার করে নায়িকাদের ‘ডিপফেক’-ভিডিও নিয়ে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সম্প্রতি এই প্রসঙ্গে ANI-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কবিতা কৃষ্ণমূর্তি বলেছেন, “প্রযুক্তি ঠিক আছে, কিন্তু আমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ভয় পাই। বিজ্ঞান বা এই জাতীয় কিছুর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে AI, সঙ্গীতের জন্য, আপনি যখন এআই সম্পর্কে কিছু চিন্তা করেন, আমি খুব ভয় পাই এবং আমি মনে করি এর অনেক অপব্যবহার হচ্ছে। AI বিশ্বের যে কোনও কঠিন ভাষায় আমার কণ্ঠ ব্যবহার করে গান তৈরি করে ফেলছে। আমি এখনও পর্যন্ত আরবি বা ফ্রেঞ্চ, বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ভাষা, রাশিয়ান, জাপানি, চীনা ভাষায় আমার কন্ঠের গান শুনেছি, না তাতে আমি একেবারেই খুশি নই। চাইনিজ ভাষায় আমার গান, যা আমি কোনও পরিশ্রম করে বানাই নি। এটা আমার ভয়েস, এতে কখনও কী আমার আবেগ থাকতে পারে? গান গাওয়ার প্রধান অংশ হল আবেগ, যে কোন রূপে, তা আধ্যাত্মিক গান হোক, সুখের গান হোক বা দুঃখের গান হোক। আপনি যদি এই আবেগকেই সৃষ্টি করতে সক্ষম না হন, তাহলে শিল্পী কী করে হবে। এআই কি আমার কণ্ঠের আবেগকে অতিক্রম করতে পারবে, তা আমি গান গাই, বা অলকা, বা শ্রেয়া (ঘোষাল), বা অরিজিৎ (সিং) গান গাই, সবাই নিজস্ব একটা গান গাওয়ার সত্ত্বা রয়েছে, এআই কি আনবে এটি জাগিয়ে তুলতে তুলতে?”
কবিতা কৃষ্ণমূর্তি পপ সম্পর্কেও বলেন, “আমি মাঝে মাঝে এটাও শুনি, এই যুগের বাচ্চারা কে-পপের জন্য পাগল, তাই না? আমি সেই প্রজন্মের নই। আমি সেই গান শুনি। এটা আমার হৃদয় স্পর্শ করে না, আমি জানি আমি তরুণ নই। আমি যদি ছোট ছিলাম এবং আমি যদি নাচতে পারতাম, তাহলে হয়তো আমি সেই সঙ্গীত উপভোগ করতাম। ধরুন আমি যদি কে-পপ বা রাশিয়ান বা অন্য কিছু গান গাই এবং হঠাৎ আমার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স কোটিতে চলে যায়। আমি টাকা চাই না। এ কারণেই আমি এআই নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ আমি মনে করি এটি কিছু কপিরাইট নিয়ম ধ্বংস করতে চলেছে৷” পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত কবিতা কৃষ্ণমূর্তি সঙ্গীত শিল্পে প্রায় ৪৫ বছর ধরে রাজ করছেন। ৬৬ বছর বয়সী গায়িকাল কন্ঠে এখনও সকল প্রজন্ম মুগ্ধ, তাঁর উল্লেখযোগ্য গানের তালিকায় রয়েছে, “নিম্বুদা”, “বোলে চুদিয়ান”, “মাইয়া যশোদা” এবং “নীন্দ চুরায়ে মেরি”।