নিজস্ব প্রতিনিধি: একটা কথা সকলেই স্বীকার করেন, বাঙালির ‘বারো মাসে তেরো পার্বন’। আবার ভারতবর্ষও নানা ভাষা নানা বেশ নানা পরিধানের দেশ। তাই গোটা ভারতেই উৎসবের অভাব নেই। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নানান নিয়ম-নিষ্ঠা এবং আচার-উপাচার থাকলেও একটা রীতি কিন্তু প্রায় সব ধর্মেই খুঁজে পাওয়া যায়। সেটি হল উপোস বা উপবাস করার রীতি। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতেই পারে কেন এই উপোস করা হয়। বা এর পিছনে ধর্মীয় বা বৈজ্ঞানিক কারণই বা কী? আসুন আমরা সেটাই জানার চেষ্টা করি।
উপোসের নানান দিক
উপোস বা উপবাস হলো একটি নৈতিক ও আধ্যাত্মিক কাজ যেখানে লক্ষ্য নিজের শরীর ও মনকে শুদ্ধ করা। পাশাপাশি ঈশ্বরের কৃপা অর্জন করাও একটি লক্ষ্য। উপ+বাস হল উপবাস, এক্ষেত্রে ‘উপ’ শব্দের অর্থ সমীপে আর ‘বাস’ শব্দের অর্থ বসবাস করা। অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের সমীপে বাস’ করার জন্যই উপবাস। প্রাচীনকালে ঋষিমুনিরা জগৎ কল্যাণের জন্য আলোর পথ বিভিন্ন পথ দেখিয়েছিলেন। তেমনই একটা হল উপোস। এই উপোস নামের আচার বা রীতি কিন্তু সর্বধর্মেই, সর্বক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়। যেমন সনাতন হিন্দুধর্মে না খেয়ে ঈশ্বরের আরাধনা করাকে বলে ‘উপবাস’, ইসলাম ধর্মে মুসলিমরা রোজা করলে বলে ‘সিয়াম’, খ্রিস্টধর্মে বলে ‘ফাস্টিং’। বিপ্লবী বা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের উপবাস করলে সেটা হয়ে যায় ‘অনশন’, আবার চিকিৎসাশাস্ত্রে একে বলে ‘অটোফেজি’। আবার কেউ কেউ নিজেকে স্লিম রাখতে উপোস করেন তো কেউ দুবেলা খেতে না পেয়েও উপোস করেন।
উপোস করলে কী লাভ
তবে আমরা পুজো ও ঈশ্বরের আরাধনার ক্ষেত্রে উপোস নিয়েই আলোচনা করবো। সনাতন হিন্দুধর্ম মতে সাধনক্ষেত্রে আরাধনা করার জন্য ইন্দ্রিয় সংযম ও উপবাস করলে ইষ্টদেবতার সান্নিধ্য লাভ করা যায়। কথিত আছে দেহ ও মন সুস্থ রাখার জন্য একাদশী তিথিতে, অমাবস্যা বা পূর্ণিমায়, বিশেষ পূজা-অর্চনাদির সময় উপবাস পালন করেন। আগেই বলেছি, ‘উপবাস’ হল দেবতার সঙ্গে সমীপে বাস। তাই নিয়ম নীতি মেনে উপবাস করলে দেহ ও মন দুইই ভালো হয়। আবার ইসলাম ধর্মে উপবাস ‘রোজা’। রোজা রাখার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ বা ঈশ্বরের সন্তুষ্টি লাভ করা। সূর্য্য উদয়ের আগের মুহূর্ত থেকে অস্ত যাওয়া অবধি উপবাস পালন করা হয়। এর আগে বা পরে আহার গ্রহণ করা যেতে পারে। রোজা মানুষকে ত্যাগ ও সংযমের শিক্ষা দেয়, বেঁধে রাখে সৌভ্রাতৃত্ত্ব ও পারস্পরিক সহমর্মিতায়।
বৈজ্ঞানিক ভিত্তি
আগেই বলেছি, চিকিৎসাবিজ্ঞানে উপবাসের নাম হল ‘অটোফেজি’। এক্ষেত্রে অটো অর্থ ‘নিজ’ এবং ফেজি অর্থ ‘খাওয়া’—নিজে নিজেকে খাওয়া। আমাদের শরীরে সমস্ত কোষেই থাকে ডাস্টবিন। সারাদিন কোষগুলি ব্যস্ত থাকার কারণে সেই ডাস্টবিন পরিস্কার করার সময় পায়না। ফলে কোষে জমা হয় টক্সিন। যার থেকে বিভিন্ন রোগের সূত্রপাত হয়। তবে মানুষ যখন খালি পেটে থাকে, কোষগুলো নিজেরাই কোষের ক্ষতিকর টক্সিনগুলি খেয়ে ফেলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একেই বলে ‘অটোফেজি’। ফলে বোঝাই যাচ্ছে উপোসের ভালো দিক রয়েছে। তবে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বা নিয়মনীতি না মেনে ইচ্ছামতো উপোস বা উপবাস করলে শরীরে অনেক ক্ষতি হতে পারে। যেমন— মাথা ঘোরা, আলস্য, ডায়রিয়া, আবার কিছু ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য, আসিড রিফ্লাক্স, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ। উপোস করলে শরীরে ডিহাইড্রেশনের আশঙ্কা থাকে। যা এড়াতে অবশ্যই জলের দরকার। সবমিলিয়ে একটা কথা বলাই যায়, ভক্তির জন্য উপবাস শরীরের পক্ষে শুভ।